রাত পোহালেই খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে। সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে টানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে এই দুই সিটির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন সিসিটিভির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে এই নির্বাচন মনিটর করবে। কমিশন এই নির্বাচনকে সংসদ নির্বাচনের স্টেজ রিহার্সেল মনে করছে। তারা সিটির ভোট সুষ্ঠু করে আগাম পরীক্ষা দিতে চায়। এ জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তারা সফলতার পরিচয় দিয়েছে। কমিশন প্রত্যাশা করছে, গাজীপুর সিটির তুলনায় খুলনা ও বরিশালের ভোট ভালো হবে।
বরিশাল ও খুলনা সিটির নির্বাচন হলেও জনসাধারণের বেশি দৃষ্টি রয়েছে বরিশালের প্রতি। খুলনা সিটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি অনেকটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তবে, ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে বরিশাল সিটিতে। এই সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামরুল আহসান (বিএনপির সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিমের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে স্থানীয় ভোটাররা মনে করছেন।
নির্বাচনী সামগ্রী ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করতে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে। মাঠে আরও রয়েছেন নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরাও।
খুলনায় ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন এবং নারী ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন।
এই সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন। তারা হলেন— মো. আ. আউয়াল (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাতপাখা), মো. শফিকুল ইসলাম মধু (জাতীয় পার্টি, লাঙ্গল), তালুকদার আব্দুল খালেক (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, নৌকা), এস এম শফিকুর রহমান (স্বতন্ত্র, টেবিল ঘড়ি), এসএম সাব্বির হোসেন (জাকের পার্টি, গোলাপ ফুল)।
খুলনা সিটির ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিটির ৩১টি ওয়ার্ডের আওতায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২৮৯টি। এগুলোর মধ্যে এবারের নির্বাচনে ১৬১টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ (ইসির ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ) বিবেচনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, মোট কেন্দ্রের ৫৬ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। নির্বাচনে ভোটকক্ষ ১৭৩২টি। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া থাকবে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৩১টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১১টি, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ৭টি, র্যাবের ১৬টি টিম এবং বিজিবি ৭ প্লাটুন। নির্বাহী হাকিম ৪৪ জন ও ১০ জন বিচারিক হাকিমকে নিয়োগ করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের সুবিধাজনক স্থানে দুটি করে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলো মোট ২ হাজার ৩১০টি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
অপরদিকে, বরিশালে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন।
এই সিটির নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন—মো. আলী হোসেন হাওলাদার (স্বতন্ত্র, হরিণ), মিজানুর রহমান বাচ্চু (জাকের পার্টি, গোলাপ ফুল), আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, নৌকা), মো. ইকবাল হোসেন (জাতীয় পার্টি, লাঙ্গল), মো. আসাদুজ্জামান (স্বতন্ত্র, হাতি), মো. কামরুল আহসান (স্বতন্ত্র, টেবিল ঘড়ি) এবং মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাতপাখা)।
সিটির ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদের বিপরীতে ৪২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
ইসির তথ্যমতে, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৬টি। এরমধ্যে ১০৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৮৪ শতাংশ কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনে মোট ভোটকক্ষ ৮৯৪টি। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
খুলনার মতো বরিশালেও প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের প্রবেশপথে দুটি করে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেই হিসাবে এই নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে থাকছে ১ হাজার ১৪৬টি ক্যামেরা।
সোমবার বরিশাল সিটিতে মোতায়েন থাকবে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৩০টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১০টি, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ৩টি, র্যাবের ১৬টি টিম এবং বিজিবি ৭ প্লাটুন। এছাড়া ৪৩ জন নির্বাহী হাকিম ও ১০ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চেয়ে খুলনা ও বরিশালের নির্বাচন ভালো হবে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান। এ সময় অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
রবিবার সাংবাদিকদের দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনে বিধিবিধান প্রতিপালনে আমাদের অবস্থান কঠোর ছিল। খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা তীক্ষ্ণ নজর রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ভোটের দিনও আমরা সরাসরি সিসি ক্যামেরায় এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করব।
(এইদিনএইসময়/১১জুন/এলএ)