৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

মাগুরছড়া ট্রাজেডির ২৬ বছর: এখনো মেলেনি ক্ষতিপূরণ

আব্দুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার
spot_img
spot_img

আজ ১৪ জুন। এক ভয়াল স্মৃতির দিন। ১৯৯৭ সালের এই দিন মধ্যরাতে লাউয়াছড়া বনের পাশে মাগুরছড়া গ্যাসকূপে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। মার্কিন তেল-গ্যাস কোম্পানি অক্সিডেন্টালের গ্যাসকূপ খনন চলাকালে প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে মৌলভীবাজার। দাউ দাউ করা আগুনের লেলিহান শিখায় সেদিন লাল হয়ে উঠেছিল গোটা আকাশ। ঘটনার পর সারাদেশের সাথে সিলেটের সরাসরি রেল রেলযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতা বুঝে উঠতে না পেরে কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গলের ভীতসন্ত্রস্ত অনেক লোক তখন ঘরের মালাপত্র রেখেই প্রাণভয়ে দিক বিদিক ছুটে যায়। সেদিন আগুনের লেলিহান শিখা প্রায় ৫-৬শ ফুট উচ্চতায় উঠেছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমলগঞ্জ উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে লাউয়াছড়া ফরেস্ট বিটের অভ্যন্তরে মাগুরছড়া এলাকায় ১৯৮৪-৮৬ ও ১৯৯৪ সালে সাইসলিক সার্ভেতে গ্যাস মজুদের সন্ধান পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন ভাগাভাগির চুক্তিতে ১৯৯৫ সালের ১১ জানুয়ারি মার্কিন বহুজাতিক তেল ও গ্যাস উত্তোলণকারী প্রতিষ্ঠান অক্সিডেন্টালের সাথে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গ্যাস উত্তোলনে ১৪ নং ব্লকের মাগুরছড়াস্থ মৌলভীবাজার-১ গ্যাসক্ষেত্র খননকালে ৮৫০ মিটার গভীরে যেতেই ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাতে ঘটে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ।

জানা যায়, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল লাউয়াছড়া মাগুরছড়া এলাকার  বিস্তীর্ণ বনজঙ্গল গাছগাছালি ও বন্যপ্রাণী। পরিবেশবাদীদের তথ্য মতে, ৬৩ প্রজাতির পশু-পাখির বিনাশ হয়। সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেলযোগাযোগ ১৬৩ দিন বন্ধ থাকে। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। মার্কিন তেল-গ্যাস কোম্পানি অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করলেও বন বিভাগ কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ইউনিকলের কাছে হস্তান্তর করে কূপটি। সর্বশেষ শেভরনের কাছে বিক্রি করেছে। শেভরন ২০০৮ সালে ওই বনে ত্রি-মাত্রিক ভূতাত্বিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করে।

বাংলাদেশ পরিবেশন আন্দোলন (বাপা)-এর মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি আ স ম সালেহ সোহেল এ বিষয়ে বলেন, মাগুরছড়া গ্যাসকূপের আগুন লাউয়াছড়া এলাকার বন ও পরিবেশ এমনকি জীববৈচিত্র‍্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে তা হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মার্কিন তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করে পালিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বন ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি পাওয়ার জন্য সরকার আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করলেও আজ পর্যন্ত বিষয়টির সুরহা হয়নি। আমরা চাই, সরকার এব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।

বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম মৌলভীবাজার-এর সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোয়াইমিন মিল্টন বলেন, দুর্ঘটনার পর তৎকালীন সরকারের খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী অক্সিডেন্টালের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করা হয়।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের প্রাক্তন সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বনের ক্ষতি নিরূপন করে দেওয়া হলেও এ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি কোন সময়ে পুষিয়ে উঠার নয়।

(এইদিনএইসময়/১৪জুন/এলএ)

সর্বশেষ নিউজ