এভাবে আবার দেখা হবে আমাদের,
চোখে চেয়ে কথা হবে,
গল্প হবে যতটা নয়-
তার চেয়ে বেশি অসহিষ্ণু নীরবতায় ডুবে যাবো,
ভাবিনি – আসলে কতকিছুই তো ভাবা হয়না।
দূরে সরে যাওয়ার সময়
ভাবা হয় নি- কতটা কাছে ছিলাম!
তোমার সাথে দেখা হওয়া তো আর
ফিরে আসার গল্প নয়।
বরং মুখোমুখি বসে এককাপ চা ও অবসন্ন বিকেল।
তুমি কথা খুঁজে না পেয়ে বললে
” এবার শীত আসার আগেই
কুয়াশার ওম পরা বিকেল চলে এলো,দেখছো?”
আমি মনে মনে বললাম
“চলে এলো অযাচিত স্মৃতি
বাউকুড়ানি বাতাসের শিস।”
তুমি বললে”এখনো ঘৃণা করো আমায়?
আমার ভালবাসার দিব্যি দিয়ে বলছি
মনটা ভীষণ পোড়ে –
ভুল করেছিলাম।
নিজের অস্তিত্বকে চিনতে দেরি হয়ে গেল।”
আমি বললাম
” এখনো ব্লাককফি খাও – অর্ডার করবো।”
হাতঘড়িতে চোখ বুলিয়ে ব্যস্তসমস্ত হয়ে উঠি।
“এখনো কপালে টিপ পড়ো ?
নাকি আজই দিয়েছো- আমার জন্য?”
ভীষণ নির্দয়তায় বলি
” কিছুই খুঁজতে যেও না –
পড়ে ফেলা উপন্যাসের বইটা ছুঁড়ে ফেলি আমি।
তুমি ব্লাককফি , আমি কিন্তু গাঢ় মালাই চা।”
খুব চুপিসারে বললে”তুমি ঈশ্বরী।”
তোমার চোখের জল দেখতে চাইনা,
বরং পৌষের আর্তি আছড়ে পড়া বিলে চোখ রাখি।
সেই এক কার্তিকের কৃষ্ণপক্ষের রাতে
ফিরে এসে আমার চোখের পাতায় তুমি চুমু খেলে,
ভুলের দায় মেপে নিয়ে,
বুকের কাছে থাকতে চেয়েছিলে,
আমি কিন্তু চোখের জল লুকোতে চাইনি।
আমি কিন্তু তোমার ফিরে আসার আনন্দে কাঁদিনি,
বিশ্বাস হারানোর বেদনায় নিঃস্ব হয়ে ছিলাম।
তোমার সাথে আবার দেখা হবে ভাবিনি।
আমি তো আর কাঠঠোকরা পাখি নই,
যে কষ্টগুলো ঠুকরে ঠুকরে বিলাপ করবো।
খুব নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো,
আসলে আঘাত করতে হলে যে মায়া টুকু অবশিষ্ট থাকতে হয় – তাও নেই।
অভিমান বা বিরাগ – গল্পটা পুরোপুরি মরে গেছে।
তবুও উপসংহারে হয়তো কিছুটা রেশ রয়েই যায়,
মরে যাওয়া বাকলের মতো রুষ্ট ক্ষোভ ,
সুতো কেটে উড়ে যাওয়া ঘুড়ির দীর্ঘশ্বাস,
নদীর ঘোলা জলে জ্যোৎস্নার বসতবাড়ি।
একটা পরিত্যক্ত বাড়ির কংকালের আর্তি,
মেঘ-ভাসা স্মৃতি,কান পাতলেই
পোড়া বাড়িতে কোনো রমনীর নুপুরের শব্দ।
“তুমি ঈশ্বরী” কথাটায় মায়ার অতীত।
তবুও দেখা হলো আমাদের,
তবুও দেখা হলো আমাদের।