পার্টিকে বিভক্ত নয় বরং নিষ্ক্রিয় এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জু, কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে চলে যারা গেছেন তাদেরকে দলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
রবিবার দুপুরে দেশে ফিরেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি জাতীয় পার্টির সব সদস্যকে খোলা মনে আহ্বান জানাচ্ছি দল থেকে যারা চলে গেছেন তারা আবারও দলে ফিরে আসুন। ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত কঠিন ও প্রতিকুল সময়ে দলের সঙ্গে থাকাদের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে।
রওশন বলেন, ‘জি এম কাদেরসহ দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটানো হবে। আমি নিশ্চিত, সব ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।’
‘আগেও বলেছি, আজও বলছি, আমি সব সময়ই জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই। আমার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমি দেখেছি, গত ৩২ বছরে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছেন।’
বিএনপির সমালোচনা করে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘বিএনপির আমলে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অনেক জনসভায় হামলা চালিয়ে কত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অন্ধকার দিনগুলো আমরা ভুলবো কি করে? বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির অধীনে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমাদের নেতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আমি ও আমার নাবালক সন্তানসহ দলের হাজার হাজর নেতাকর্মী জেল খেটেছেন। তখন আমাদের জনসভাও করতে দেয়া হয়নি।’
রংপুর সিটি করপোরেমন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের প্রসঙ্গে রওশন বলেন, ‘রংপুর জাতীয় পার্টি প্রাণ। এটা এরশাদের বাড়ি। তাই আসনটি যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে এবং জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙল নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হবে এমন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেব। ইনশাআল্লাহ। এজন্য সব নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে দেশে এর প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা।
রওশন বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখতে সর্ববাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দুর্নীতি, অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু ক্রটি রয়েছে।
‘আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অবগত আছেন এবং আমি তাঁকে অনুরোধ করব এই বিষয়গুলোকে আরো ঘনিষ্টভাবে সমাধান করতে এবং তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের আরো বেশি আন্তরিক ও সক্রিয় হতে হবে।
এসময় রওশন জানান, তিনি এখন সুস্থ আছেন তবে তা পায়ে কিছু সমস্যা আছে এবং ফিজিওথেরাপি নিতে হচ্ছে। ব্যাংককে চিকিৎসার সময় সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
রবিবার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন রওশন এরশাদ। এবারও তিনি রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে উঠবেন বলে জাপার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
রওশন এরশাদকে স্বাগত জানাতে জাপার কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেনসহ দলের কিছু নেতা-কর্মী এবং জাপার বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক, মসিউর রহমান, গোলাম মসীহও এসময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।