৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার

পল্টনে সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছে বিএনপি?

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img

 

নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদসহ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটি ঢাকার বাইরে সবকটি বিভাগে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতার মাঝেও গণসমাবেশ করেছে।

বিএনপির দাবি, সেই সমাবেশগুলো তারা সফল করতে পেরেছে। এখন তাদের টার্গেট ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করা। সেই সমাবেশ করতে চায় দলের চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। যদিও বিএনপি ওখানেই সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে।

দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো কোথাও সমাবেশ করতে হলে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে জন্য পুলিশকে অবহিত করে রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সেটি লিখিতভাবে জানানো হয়, কোথাও মৌখিকভাবে। আমরা সরাসরি লিখিতভাবে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছি। সেটা নিয়ে সরকার টালবাহানা করছে। একেক সময় একেক জায়গার কথা বলছে তারা। শুরু থেকেই ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তুরাগ পাড়, মিরপুরের একটি মাঠ অথবা রূপগঞ্জের বাণিজ্যমেলার মাঠ ব্যবহার করতে বলছে। এর পাশপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও তারা দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা কোনো ভাবেই সেখানে যাবো না।

  1. সূত্র জানায়, বিএনপি এমন একটি দিনে গণসমাবেশের আয়োজন করেছে যেদিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। ১০ ডিসেম্বর এলে বাংলাদেশে যারা গুম-খুনের স্বীকার হয়েছেন, সেই পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতি বছর সেমিনার-মানববন্ধন করে থাকে। ফলে তাদের যে আকুতি, সেটি সামনের দিনগুলোতেও আরও আবেদনময়ী হয়ে উঠেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়টির উপর সর্বাধিক জোর দিয়ে আসছে।

এমন পরিস্থিতিতে এতদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমনকি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও যে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছিল বিএনপির সমাবেশ ঘিরে, মঙ্গলবার থেকে সবারই কথাবার্তায় নমনীয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও অনেকটা ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে কথা বলছেন। যার শুরুটা করেছিলেন মির্জা আব্বাস। বলেছিলেন, কাছাকাছি যদি কোনো বিকল্প জায়গায় তাদের অনুমতি দেওয়া হয় তবে তারা ভেবে দেখবেন। মির্জা ফখরুলও এর পরের দিন প্রায় একই সুরে কথা বলেন।

কিন্তু তখনও সরকার দলীয় নেতারা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন যে, বিএনপি নেতাকর্মীদের যেকোনো ভাবেই হোক প্রতিহত করা হবে। ১০ ডিসেম্বর তারা রাজপথে সমাবেশের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করলে চরম মূল্য দিতে হবে, এমনটি বলে আসছিলেন। মঙ্গলবার হঠাৎ করে উভয় পক্ষেরই সুর কিছুটা নরম হয়ে আসে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঙ্গলবার ধারণা দিয়েছিলেন, সমঝোতা একটি হবে সেটা যা-ই হোক। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিএনপি কি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের আকাশে আজ ঘনকালো মেঘ ঘনিভূত হয়েছে, আবার চট করে চলে যায়। আমি একজন চিরন্তন আশাবাদী মানুষ। আশা করি বিরোধী দল শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাবেশ করবে। দলীয় ভাবে আমরা কখনো তাদের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করিনি। সংঘাত চাই-ও না।’

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ১৫টি দেশের কূটনীতিকদের দেওয়া যৌথ বিবৃতির পর যেন বরফ কিছুটা গলতে শুরু করে। মঙ্গলবার রাত থেকেই বিএনপির সমাবেশ ঘিরে প্রবল উত্তেজনার যে পারদ ছিল, তা কিছুটা নিম্নমুখী হচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগের ধারণা, বিএনপির নেতাকর্মীরা ১০ তারিখ ঢাকায় ঢুকলে আর ছাড়তে চাইবে না। কিন্তু বিএনপির তরফ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, এটি তাদের একটি সমাবেশ মাত্র। এই সমাবেশ থেকেই তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবেন।

কূটনৈতিক মিশনগুলোর পক্ষ থেকেও দুই দলকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের কোনো কর্মকাণ্ডে যেন মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সে ব্যাপারে আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

এমন বাস্তবতায় সরকার হার্ডলাইন থেকে সরে এসে বিএনপিকে ছাড় দেবে কিনা সে নিয়ে মঙ্গলবার থেকেই উচ্চ মহলে আলোচনা হচ্ছে। ডিএমপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি পেতেও পারে। এ ক্ষেত্রে সমাবেশ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সেই অনুমতি তাদের দেওয়া হবে, যাতে করে আগেভাগে সেখানে লোকজন জড়ো হয়ে সড়কে মানুষ ও যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে।

 

সূত্রটি আরও জানায়, বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী তাদের দলীয় কার্যালয়ের আশেপাশে আরামবাগেও অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে তার জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

 

জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কঠোর অবস্থানে থাকলেও ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে তারা কোনো ধরনের দমন পীড়নের দিকে যেতে চায় না। যে কারণে সব পক্ষ থেকেই ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে একটি সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এক্ষেত্রে বিএনপিকেও স্পষ্ট করতে হবে যে, ১০ ডিসেম্বর তারাও সমাবেশের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না। এমনকি, ওইদিন ঢাকা দখলের যে গুজব বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, সেটির যে কোনো ভিত্তি নেই, তাও নিশ্চিত করবে দলটি। এ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে খোলাসা করার চেষ্টাও চলছে।

সর্বশেষ নিউজ