আগস্ট মাস থেকে গরুর মাংসের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ ঘোষণা দেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন। তবে, এই দাম কত তা স্পষ্ট করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের খামারে খুব ভালো মানের যে গরু উৎপাদন হয় এবং বাজারে যেই দামে বিক্রি করা হয় তার দাম আমরা কেজিপ্রতি ৫০ টাকা কমিয়ে দেব। নতুন দাম কার্যকরে প্রয়োজনে বাজার তদারকি বাড়ানো হবে।
মো. ইমরান হোসেন বলেন, উন্নত জাতের গরু পালন, উন্নত জাতের ঘাস চাষ, গরুর খাদ্যের দাম কমানো, হাটে গরুর হাসিল কমানোসহ আমরা বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি। এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে মাংসের দাম কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমানো সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশীয় জাতের গরু কৃত্রিম প্রজননের জন্য চার ধরনের সিমেন প্রস্তুত করে। তা হচ্ছে- আরসিসি, নর্থ বেঙ্গল গ্রে, শাহীওয়াল ও মুন্সিগঞ্জ। এসব জাতের গরু থেকে দুধ উৎপাদন সম্ভব নয়, শুধু মাংস উৎপাদন হয়। এই জাতের একটা দুই বছরের গরু থেকে ১২০ থেকে ১৫০ কেজি মাংস আহরণ করা সম্ভব। অন্যদিকে দেশীয় গরুর সঙ্গে এইসব জাত সংকরায়ণ না করে আমরা যদি ব্রাহমার মতো উন্নত জাতের সংকরায়ণ করি, তাহলে সমপরিমাণ শ্রম ও ব্যয়ের পরিবর্তে আমরা দুই বছরের একটা গরু থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি মাংস আহরণ করতে পারব। এই একটা মাত্র পদক্ষেপেই মাংসের উৎপাদন খরচের অনেক অংশ কমানো সম্ভব। যা সরাসরি মাংসের মূল্যহ্রাসে সাহায্য করবে। এতে নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ গরুর মাংসের স্বাদ নিতে পারবে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ সেমিনারের আয়োজন করে। অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান।
কর্মশালার শুরুতেই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বর্ণিত কর্মশালার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার অভিযান পরিচালনা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নকল ও ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ভোক্তাবৃন্দ কোন পণ্য বা সেবা ক্রয় করে প্রতারিত হলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করে থাকেন। প্রায়শই ভোক্তারা গরুর মাংসের উচ্চ মূল্যের বিষয়ে অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররাও গরুর মাংসের উচ্চ মূল্যের যৌক্তিকতা কতটুকু তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে গরুর মাংসের মূল্য আমাদের দেশের তুলনায় কম। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখানকার গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি গরু, ছাগল, হাস, মুরগি, ভেড়াসহ অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণী। গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য সংশ্লিষ্ট এই খাতের কিছু টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতিব জরুরি। সে প্রেক্ষিতে, অধিদপ্তর টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করে মাংসের মূল্য হ্রাস করে ভোক্তাবৃন্দের ক্রয়সীমার মধ্যে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস্ অ্যাসোসিয়েশনের সাথে আলোচনা করে। এই আলোচনার উদ্দেশ্য ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যেই আয়োজন করা হয়েছে আজকের এই কর্মশালা।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনোয়ার হোসাইন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (কৃত্রিম প্রজনন অফিস), ঢাকা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী এবং সভাপতি হিসেবে ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
(এইদিনএইসময়/৩০জুলাই/এলএ)