জিরার শুল্কায়ন মূল্য প্রায় দ্বিগুণের মত বাড়ানোয় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত জিরা বন্দর থেকে খালাস করছেন না বন্দরের জিরা আমদানিকারকরা। এতে করে গত ৮ দিন ধরে হিলি স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে আটকা পড়ে আছে ১২শ’ টন জিরা।
বাড়তি মূল্যে শুল্কায়নের ফলে এসব জিরা খালাস করলে লোকসান গুনতে হবে যার কারণে জিরা খালাস বন্ধ রেখেছেন বলে দাবী বন্দরের আমদানিকারক ও সিআ্যন্ডএফ এজেন্টগনের। বাড়তি মূল্য কার্যকর হলে দাম আরও বাড়ার আশংকা তাদের। এদিকে নতুন শুল্কায়ন মূল্যেই জিরা খালাস নিতে হবে দাবী কাস্টমসের।
এ ব্যাপারে হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক শাহিনুর রেজা বলেন, দেশের বাজারে জিরার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জিরা আমদানি করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশ থেকে জিরা আমদানি হলেও সেসব দেশ থেকে জিরা আমদানিতে সময় লাগে এক থেকে দেড়মাস পর্যন্ত। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে জিরা আমদানিতে সময় লাগে মাত্র একসপ্তাহ। যার কারণে ভারত থেকে জিরা আমদানি অব্যাহত রেখেছেন আমদানিকারকরা। ইতোমধ্যেই পূর্বের করা এলসির বেশ কিছু জিরা বন্দরের ভেতরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কাস্টমস জিরার শুল্কায়ন মূল্য পূর্বের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করার কথা জানিয়েছে। কিন্তু আমাদের পূর্বের এলসির আমদানিকৃত জিরাগুলি আমরা পূর্বের যে শুল্কায়ন মূল্য সেই মূল্যেই শুল্ক পরিশোধ করতে চাই। এতে করে দেশে জিরার দামের যে ঊর্ধ্বমুখী সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কিন্তু নতুন মূল্যে শুল্ক পরিশোধ করে জিরাগুলি খালাস নিলে বিপুল অংকের টাকা লোকসান গুনতে হবে আমাদের। এতে করে আমরা আমদানিকারকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবো তেমনি দেশের বাজারে জিরার দাম আরও বাড়বে। তাই আমাদের দাবী পূর্বের এলসির বিপরীতে আমদানি করা জিরাগুলি পূর্বের শুল্কায়ন মূল্যেই ছাড়করণ যেন দেওয়া হয়।
অপর আমদানিকারক রবিউল ইসলাম বলেন, পূর্বে বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত প্রতি টন জিরা ১হাজার ৮৫০ মার্কিন ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করে ছাড়করণ দিত কাস্টমস। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কোন এক আমদানিকারক আফগানিস্তান থেকে জিরা আমদানি করেন যা কাস্টমসে সাড়ে ৩হাজার মূল্যে শুল্কায়ন করে ছাড় দেয় কাস্টমস। কিন্তু সেই জিরার গুনগতমান অত্যন্ত ভালো বা এটি উন্নতমানের জিরা হতে পারে। যেমন শাহি জিরা যার বাজার মূল্য অনেক বেশী এমন জিরাও হতে পারে। কিন্তু সেই জিরার দাম হিসেব করে এখন যদি ভারত থেকে আমদানিকৃত জিরার দাম ও মান একই হিসেব করে একই শুল্কায়ন মূল্য আরোপ করে তাতে করে আমদানিকারকরা ব্যাপক আকারে ক্ষতির মুখে পড়বে। তারপরেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর যদি রাজস্ব আহরণের স্বার্থে যদি নতুন শুল্কায়ন মূল্য বাস্তবায়ন করতে চায় সেক্ষেত্রে আমাদের দাবী রাখবো। যে এলসিগুলো আদেশের পূর্বেই করা হয়েছে বা ইতোমধ্যেই আমদানি হয়ে গেছে সেই জিরাগুলি যেন অন্তত পূর্বের ১ হাজার ৮৫০ মার্কিন ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করে ছাড়করণ দেওয়া হয়।
হিলি স্থলবন্দরের সিআ্যন্ডএফ এজেন্ট শেরেগুল ইসলাম বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ২৪ জুলাই পর্যন্ত প্রতি মেট্রিকটন জিরা ১ হাজার ৮৫০ মার্কিন ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করে আরোপিত শুল্ক আদায় পূর্বক ছাড়করণ দিয়েছে কাস্টমস।কিন্তু ২৫ শে জুলাই থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মৌখিক ভাবে প্রতি টন জিরা সাড়ে ৩ হাজার মার্কিন ডলার করে শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণের নির্দেশনা দেয়। এর ফলে আমদানিকারকরা বন্দরের অভ্যন্তর হতে তাদের আমদানিকৃত জিরাগুলি খালাস নেওয়া বন্ধ করে রেখেছেন। বাড়তি শুল্কায়ন মূল্যে জিরা খালাস করলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এই কারণে তারা জিরাগুলি খালাস করে নিচ্ছেন না। পূর্বের প্রতি টন জিরার শুল্কায়ন মূল্য ১ হাজার ৮৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে প্রতি কেজি জিরার শুল্ক দিতে হচ্ছিল ১২০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে সাড়ে ৩ হাজার মার্কিন ডলার হিসেবে শুল্কায়ন মূল্য হিসেবে কেজি প্রতি শুল্ক দিতে হবে ২২৮ টাকা। তাতে করে কেজি প্রতি বাড়তি ১০৮ টাকা শুল্ক দিয়ে এসব জিরা খালাস করে বাজারজাত করলে তাদের আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। যার কারণেই আমদানিকারকরা তাদের আমদানিকৃত জিরা বন্দর থেকে খালাস বন্ধ করে রেখেছেন। যেসব জিরা আমদানি হচ্ছে সেগুলো বন্দরের ওয়্যার হাউজে নেমে রাখছেন।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, হিলি স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে আমদানিকৃত জিরাগুলি এজন্যই আটকা পড়েছে বা আমদানিকারকরা খালাস নিতে পারছেন না এর মুল কারণ হচ্ছে কাস্টমস কর্তৃক জিরার শুল্কায়ন মূল্য প্রায় দ্বিগুণ নির্ধারণ করা। পূর্বে প্রতি টন জিরা ১ হাজার ৮৫০ মার্কিন ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করলেও বর্তমানে সাড়ে ৩ হাজার মার্কিন ডলার নির্ধারণ করায় আমদানিকারকরা জিরাগুলি খালাস করে নিতে পারছেন না। পূর্বে ৩০টন ওজনের একট্রাক জিরা আমদানিতে ৩০ লাখ টাকার মত শুল্ক পরিশোধ করতে হতো এখন যে মূল্য নির্ধারণ করেছে তাতে করে একই পরিমাণ জিরা আমদানিতে প্রায় ৬০ লাখ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এতে করে আমদানিকারকরা যেমন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি বাজারে এর প্রভাব পড়বে। তবে কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের অনুরোধ পূর্বের যেসব এলসির বিপরীতে জিরা আমদানি করা হয়েছে সেগুলো যেন পূর্বের শুল্কায়ন মূল্যেই শুল্ক নিয়ে ছাড়করণ দেওয়া হয়। তাতে করে আমদানিকারকরা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে তেমনি বাজারে জিরার দাম বাড়ার প্রভাব থাকবেনা বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হিলি স্থলবন্দরের ম্যানেজার অশিত স্যানাল বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে জিরা আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে কয়েকদিন ধরে বন্দর থেকে জিরা খালাস নেওয়া বন্ধ রয়েছে। কি কারণে ব্যবসায়ীরা জিরা খালাস করছেননা তা বলতে পারছিনা। বন্দরের অভ্যন্তরে শেডগুলোতে ৪৩টি ট্রাকে আমদানিকৃত ১হাজার ২০৪টন জিরা নামিয়ে রাখা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে এসব জিরা বন্দরে হল্টেজ অবস্থায় রয়েছে।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ কমিশনার বায়জিদ হোসেন বলেন, পূর্বে বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত প্রতি টন জিরা ১ হাজার ৮৫০ মার্কিন ডলার শুল্কায়ন মূল্য ধরে আরোপিত শুল্ক আদায় করা হত। কিন্তু সম্প্রতি জিরার বাজার মূল্য বেশী হওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এই জিরার শুল্কায়ন মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা শুধু যে হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে তা কিন্তু নয় এটি দেশের সব কাস্টমস হাউজ ও শুল্কস্টেশনেই বাড়ানো হয়েছে। পূর্বে প্রতি টন জিরার ১ হাজার ৮৫০ মার্কিন ডলার যে শুল্কায়ন মূল্য ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৫শ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাড়তি মূল্যের ফলে ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে আমদানিকৃত জিরা খালাস নেওয়া বন্ধ রেখেছেন। তবে এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই তারা খালাস নিতে চাইলে ৩হাজার ৫শ মার্কিন ডলার শুল্কায়ন মূল্যে শুল্ক পরিশোধ করেই নিতে হবে।
(এইদিনএইসময়/৩আগস্ট/তাবী)