২১ মে ২০২৫, বুধবার

ঢাবির মার্কেটিং বিভাগ ও ভোক্তার সমঝোতা স্মারক

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img
spot_img

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এসময় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ বিষয়ক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধ্যাপক ড. হবিবুল্লাহ সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মঈন, মুখ্য আলোচক ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান  অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম।

উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শহরিয়ার, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।

স্বাগত বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার শোকের মাস আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণায় এক নব দিগন্তের সূচনা হলো।

অতঃপর ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনটি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে যেভাবে ভূমিকা পালন করছে সে বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তাহমিনা বেগম।

মহাপরিচালক আলোচনার শুরুতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান।

মহাপরিচালক বর্তমান সমাজে বিদ্যমান ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরে তা প্রতিরোধে অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি, কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই সেমিনার।

তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। অধিদপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা এই পদক্ষেপেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।

সভায় মহাপরিচালক এই সেমিনারের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি আরও বলেন, এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে শিক্ষার্থীদের বর্তমান বাজার ব্যবস্থা সম্পর্কে বাস্তবিক ধারণা হবে। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার বিষয়ে গবেষণা করা হলে গবেষণালব্ধ ফলাফল আমাদের পলিসি তৈরিতে সহায়ক হবে।  এ বিষয়ে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে যোগাযোগ করা হবে।

মহাপরিচালক বলেন, যেকোনো তথ্যর জন্য অধিদপ্তরের হট লাইন নম্বর ১৬১২১ এ ফোন করে ভোক্তাগণ  তথ্য জানতে পারছেন। এছাড়াও ভোক্তা-অধিকার বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও  ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত বির্তক প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের আহবান জানান। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে একটি ভেজালমুক্ত ও ভোক্তাবান্ধব পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ভোক্তাদের চাহিদার প্রায় ২০% ভোগ্যপণ্য ৪-৫টি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তার প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের যোগান দিচ্ছে। ব্যবসার মূল লক্ষ্য লাভ করা তবে সেখানে ভোক্তার সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা দরকার। ভোক্তাগণকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কর্মক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের পাশাপাশি ভোক্তাদের স্বার্থ দেখতে হবে। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়াও তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আসল পণ্য ও নকল পণ্যের তুলনা করার লক্ষ্যে একটি মিউজিয়াম করার প্রস্তাব দেন।

প্রধান অতিথির আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মঈন বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানকেই আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদেরকে নৈতিক বিষয় মাথায় রেখেই ভোক্তাদের সন্তুষ্টি বিধান নিশ্চিত করে লাভ করতে হবে। এ লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ভোক্তাদের সচেতন করার লক্ষ্যে এ ধরনের প্রোগাম আয়োজন করা জরুরি।

মুক্ত আলোচনায় মহাপরিচালক অংশগ্রহণকারীবৃন্দের ভোক্তা-অধিকার আইন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। আলোচনা শেষে মহাপরিচালক শিক্ষার্থীদের ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে তথা অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান।

সেমিনারের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তিনি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রুপ করে প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তাব রাখেন। এছাড়াও তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর পরিধি বাড়ানোর অনুরোধ জানান। পরিশেষে তিনি সকলের সমন্বিত কাজ করার মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সহজ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে সেমিনারে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সেমিনার শেষে মাস্টার্স অব প্রফেশনাল মার্কেটিং প্রোগ্রাম চালুকরণ ও বর্ণিত প্রোগ্রামসহ মার্কেটিং বিভাগের কারিকুলামে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

এই সমঝোতা স্মারকের ফলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে আইনটি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে নিবিড়ভাবে কাজ করার এক নব দিগন্তের সূচনা হলো।

(এইদিনএইসময়/০৩আগস্ট/এলএ)

সর্বশেষ নিউজ