দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে কিডনী রোগীর সংখ্যা। কিন্তু সেই তুলনায় চিকিৎসা সেবা বাড়ছে না। সরকারিভাবে এই সেবা অত্যন্ত অপ্রতুল। বেসরকারিভাবে কিডনী রোগীর চিকিৎসা সেবা ব্যয়বহুল। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা ব্যয়ের একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
একজন কিডনি জানান, তার চিকিৎসা ব্যয় মাসে অন্তত ৩৬ হাজার টাকার মতো হচ্ছে। তবে ভর্তুকিতে চিকিৎসা পেলেও মাসে খরচ হতো ২০ হাজার টাকা। মোস্তফা নামের মধ্যবয়ী ওই রোগী জানান, আমার মতো যারা ভর্তুকি পান না, তাদের খরচের পরিমাণ আরও ১৬ হাজার বেশি।
এক হিসাবে দেখা যায়, দেশে কিডনী রোগীর ৮০ ভাগেরই চিকিৎসা চলে ভর্তুকি ছাড়া। খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাদের স্বজনরা।
আরও শঙ্কার কথা হচ্ছে, গত এক বছরে দেশে কিডনি রোগী ও মৃত্যুর হার বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। চিকিৎসা খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন হাজার হাজার রোগী। এমনকি আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না অনেক রোগী।
রোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একজন রোগীর ডায়ালাইসিস খরচ আড়াই হাজার, ইঞ্জেকশন দেড় থেকে ৫ হাজার, বাধ্যতামূলক ওষুধের দাম ৫ হাজার পর্যন্ত। রোগীর স্বজনদের চোখেও কষ্টের জল।
তারা জানান, একজন রোগীর এ খরচ সপ্তাহে ২ বার। এতে করে মাসে খরচ হচ্ছে ৩০ হাজার টাকার মতো। এ হিসেব বেসরকারি হাসপাতালের। তিনি জানান, ৮০ ভাগ ডায়ালাইসিসই হচ্ছে এভাবে।
১৪ বছর ধরে নিজের চিকিৎসায় এভাবে খরচ টানছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। চিকিৎসার পেছনে তার পেনশনের পুরো টাকা তো গেছেই, বিক্রি করতে হয়েছে পরিবারের সর্বস্ব।
তিনি বলেন, সরকার যেখানে স্বাস্থ্যখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে, সেখানে এই সামান্য ভর্তুকি কি আমাদের দিতে পারে না? অনেক রোগী আছে যাদের ৫০০ টাকারও সামর্থ্য নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালে রোগীপ্রতি সপ্তাহে ভর্তুকি ৪ হাজার টাকা। তবে নানা জটিলতা পেরিয়ে এই সুবিধাটা পাচ্ছে ২০ ভাগেরও কম রোগী। তাদের একজনের স্ত্রীর ডায়ালাইসিসে ৫ বছরে সঞ্চয়ের ১২ লাখ টাকা শেষ। ৬ মাস হলো সরকারের ভর্তুকির শিডিউল পেয়েছেন অসহায় স্বামী। এখনও তার খরচ মাসে ২০ হাজার টাকার মতো। কখনো রাইড শেয়ার কখনো ফুটপাতে টুকটাক বেচাবিক্রি করে কোনোরকমে চিকিৎসাটা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে বলছে, ২০২১ সালে দেশে কিডনি রোগী ছিল প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার। যা এক বছরে বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজারের বেশি। খরচের চাপে চিকিৎসাই করাতে পারছে না অর্ধেক রোগী। মৃত্যুর সংখ্যাও ৫০০ থেকে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
একজন কিডনি চিকিৎসক জানান, প্রথমেই স্ক্রিনিং হচ্ছে, কিডনি বিকল হয়েছে কিনা। যদি স্টেজ ওয়ান বা স্টেজ টু’তে আমরা ধরতে পারি যে, কিডনি আক্রান্ত হচ্ছে; তবে কিডনি বিকল হওয়া রোধ করা যায়। সরকার যদি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টে ভর্তুকি দেয় তাহলে ভর্তুকির পরিমাণও কমে যাবে।