পৃথিবী একটা উপন্যাস। স্রষ্টা এর ঔপন্যাসিক। উপন্যাসের একটি চরিত্র যতটুকু স্বাধীনতা পায় পৃথিবীর কোন একজন মানুষ ঠিক ততটুকুই স্বাধীনতা পায়। উপন্যাসের একটি চরিত্রের উপর অন্য একটি চরিত্রের প্রভাব যতটুকু একজন মানুষের উপর অপর একজন মানুষের প্রভাব অতটুকুই।
একজন ঔপন্যাসিক উপন্যাস লেখার সময় বা একজন পাঠক উপন্যাস পড়ার সময় চরিত্রগুলোকে জীবন্তই দেখে। লেখা হয়ে যাওয়া বা পাঠ হয়ে যাওয়ার পর চরিত্রগুলোকে মনে হয় মৃত। যেভাবে পৃথিবীতে অতীত হল মৃত। একবার ঘটে যাওয়ার পর কোন কিছুই আর বদলানো সম্ভব হয় না। আর বর্তমান হল স্রষ্টার উপন্যাস লেখার সময়ের মতই জীবন্ত। যে কোন কিছুই ঘটতে পারে বলে মনে হলেও উপন্যাসিক যেমন বিভিন্ন বিষয় ভেবে চিন্তে ঘটনাগুলো সাজান স্রষ্টাও সেভাবে পৃথিবীর ঘটনাগুলোকে সাজান।
ধরা যাক উপন্যাসের একটা চরিত্র অপর একটা চরিত্রকে ভালবাসে। কিন্তু ঔপন্যাসিক কাহিনীকে এমনভাবে সাজালেন যে তাদের মিলন হল না। সেই কাহিনীতে অপর কিছু চরিত্র চাচ্ছিল তাদের মিলন হোক(এই চাওয়াটা অবশ্যই ঔপন্যাসিকের চাওয়ার কারণেই সম্ভব হয়েছে)। হতে পারে তাদের মিলন চেয়ে অপর চরিত্রগুলো দিয়ে ঔপন্যাসিক মিছিল মিটিং সভা সমাবেশও করিয়েছেন। কিন্তু একটা মহৎ ট্রাজেডি নির্মাণের স্বার্থে লেখক বিচ্ছেদেই সমাপ্তি টানলেন।
পৃথিবীতেও অসংখ্য মহৎ ট্রাজেডি ঘটে চলেছে। উপন্যাসের চরিত্রের মত কেউ কেউ সেই ট্রাজেডিতে বিপর্যস্ত হচ্ছে, কেউ উপভোগ করছে, কেউ প্রতিবাদ সভা সমাবেশ করছে। আবার কখনো স্রষ্টার ইশারায় কোন বীরের জন্ম হচ্ছে। সে বিপদগ্রস্ত জাতিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করছে।
আপনি আমি যতই চাই স্রষ্টার ইচ্ছার বাইরে যেতে পারব না। তিনি কাহিনীগুলোকে যেভাবে চিন্তা করছেন, চরিত্রগুলোকে যেভাবে নির্মাণ করছেন ঠিক সেভাবেই তা ঘটবে। আপনি আমি যে প্রতিবাদ করছি সেগুলোও অর্থহীন নয় বরং তা ট্রাজেডিকে আরো মহৎ করে তুলছে। দিনশেষে আমরা উপন্যাসের একটি চরিত্র বৈ কিছুই নই।