২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার
--বিজ্ঞাপন-- Bangla Cars

‘কান্না লুকাতে হয় মানুষের কাছ থেকে, প্রকৃতি থেকে নয়’

সাদাত হোসাইন
spot_img

অবন্তী আলগোছে লুকিয়ে তার চোখ মুছে ফেলতে চাইল। কিন্তু পারল না। আহির তার দিকে না তাকিয়েই বলল, ‘মানুষের কাছ থেকে কান্না লুকাতে হয়, কিন্তু প্রকৃতির কাছ থেকে নয়।’

অবন্তী আচমকা থমকে গেলো। আহির কী করে বুঝল যে সে কাঁদছে। আহির বলল, ‘বরং আমার যদি কখনো খুব মন খারাপ হয়, কান্না পায়, তাহলে আমি কী করব জানো?’

‘কী?’

‘একা একা এমন কোনো সমুদ্রের কাছে গিয়ে বসে থাকব। এমন অন্ধকারে। কিংবা ধরো, এমন সুনসান গহীন কোনো অরণ্যের কাছে। তারপর তাদের কাছে মনের সব কষ্ট মেলে দিয়ে কেঁদে ফেলব। কারণ, মানুষ কষ্ট শুষে নিতে জানে না, কিন্তু প্রকৃতি জানে।’

বলে সামান্য থামল সে। তারপর হঠাৎ হাসল। বলল, ‘আশ্চর্যের বিষয় কি জানো? আমার কখনো কান্নাই পায় না। হা হা হা।’ বলে শরীর কাঁপিয়ে হাসল আহির।

তারপর বলল, ‘আমি সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। কখনো কাঁদব বলে কত কী ভেবে রেখেছি, অথচ কোনো দুঃখই আমাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। ফলে কাঁদাতেও পারেনি। কী বিচ্ছিরি না ব্যাপারটা?’

‘বিচ্ছিরি হবে কেন?’

‘বিচ্ছিরি এই জন্য যে, যে মানুষ কাঁদতে জানে না, সে হাসির আনন্দও উপভোগ করতে পারে না। তাই হাসি উপভোগ করতে হলেও কান্নাটা জরুরী।’

আহিরের এই কথায় অবন্তী চুপ করে রইল। আহির বলল, ‘কেন কাঁদছিলে তুমি?’

‘ওই যে, হাসির আনন্দ ঠিকঠাক বোঝার জন্য।’ বলে হাসল অবন্তী। আহিরও আর প্রশ্ন করল না। তবে সে উঠে দাঁড়াল।

অবন্তী বলল, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’

‘যা দেখার জন্য এসেছিলাম, তা দেখতে।’

বলেই হাঁটতে শুরু করল সে। সঙ্গে অবন্তীও। আহির যেখানে এসে দাঁড়াল। সেখানে কেবলই অন্ধকার। তবে গাছপালার ফাঁক ফোঁকড় গলে জোছনার আলো এসে যেন নিপুণ এক শিল্পকর্ম এঁকেছে মাটিতে। অবন্তী অবশ্য সেই শিল্পকর্ম দেখতে পেলো না। সে কেবল দেখল হাজার হাজার জোনাকি পোকা আলো জ্বেলে উড়ে বেড়াচ্ছে অন্ধকারে। তারপর জলের ঘূর্ণির মতো একযোগে ঘুরে যাচ্ছে অনেকটা পথ। তারপর আবার ফিরে আসছে। তারপর আবার ঘুরে আসছে।

কী আশ্চর্য! এমন কিছুও হয় নাকি? সত্যি সত্যিই হচ্ছে এসব?

অবন্তী মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে রইল। আহির ধীরে তার কাছে চলে এলো। তারপর একটা হাত বাড়িয়ে আলতো করে তাকে কাছে টেনে আনল। তারপর তাকে এক হাতে বেষ্টন করে দাঁড়িয়ে রইল ওই সীমাহীন অন্ধকারে। ওই সুনসান নীরবতায়। ওই অপার্থিব আলো ও অন্ধকারের জগতে।

অবন্তী হঠাৎ ফিসফিস করে বলল, ‘আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরবেন?’

আহির কথা বলল না। তবে সে শক্ত করে অবন্তীকে জড়িয়ে ধরল।

অবন্তী বলল, ‘জীবন এমন কেন?’

‘কেমন?’

‘স্বপ্নের মতন।’

‘সবাই তো এমন জীবনই চায়। স্বপ্নের মতন জীবন।’

‘কিন্তু স্বপ্ন তো ভেঙে যায়। শেষ হয়ে যায়।।’

‘যা শেষ হয়ে যায়, তা-ই সুন্দর।’

‘যা শেষ হয়ে যায়, তা-ই সুন্দর?’

‘হুম।’

‘এই স্পর্শও তাই এতো সুন্দর? এই জড়িয়ে রাখাও?’ বলল অবন্তী।

এই প্রশ্নে আহির যেন থমকে গেলো। সে বলল, ‘তুমি চাও এ শেষ হয়ে যাক?’

‘আপনিই তো বললেন, যা শেষ হয়ে যায়, তাই সুন্দর! তাহলে?’

~ ‘সে এসে বসুক পাশে’।

সাদাত হোসাইনের নতুন উপন্যাস। অটোগ্রাফ সহ রকমারিতে অর্ডার করতে ক্লিক করুন এখুনি- https://rokshort.com/I5WPI8zr7

সর্বশেষ নিউজ