তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত অন্তত ১১ হাজার ভবন ধসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব ভবনে কত হাজার বা কত লাখ মানুষ ছিলেন, কত মানুষের জীবন পৃষ্ট হয়ে মাটিতে মিশে গেছে সেই হিসাব এখনো মেলেনি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এ নিয়ে কাজ করছে।
বার্তা সংস্থা রয়র্টাস জানায়, ভয়াবহ ভূমকিম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় এখন র্পযন্ত ৫ হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
তবে তুরস্কের দুর্যোগ কত্রপক্ষের মতে, দেশটিতে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৫৪৯ জনের বেশি। তুরস্কের তুরস্কের দিয়ারবাকিরে ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিতদের সন্ধান করছেন উদ্ধারকর্মীরা।
এদিকে ভূমি বিপর্যয়ের ফলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সয়লু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে: গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস।
সংস্থাটি বলছে, তুরস্কে ভূমিকম্পে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে প্রবল শীতের মধ্যে হাজারো বাস্তুহারা মানুষের জীবন চরম দুর্দশায় পড়েছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারনে উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। এরমধ্যে যোগ হয়েছে বৃষ্টির তোড়। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থিত তুর্কি শহর ওসমানিয়েতে উদ্ধারকাজ বারবার ব্যাহত হচ্ছিল। তারওপর সেখানে ছিলো না কোনো বিদ্যুৎ।
দেশটির দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ওরহান তাতারের ভাষ্যে, আহত হয়েছেন ২০,৫৩৪ জন; পাশাপাশি ভবন ধসেছে প্রায় ১১ হাজার।
ভূমিকম্প তুরস্কের শহরগুলোতে ধবংসলীলা চালিয়েছে, অনেক আবাসিক এলাকাই এখন সম্পূর্ণ লণ্ডভণ্ড । অন্যদিকে, যুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু লাখ লাখ সিরিয় নাগরিকের দুর্ভোগও উঠেছে চরমে। সিরিয়ার আত্রায়েব শহরের বাসিন্দা আবদুল সালাম আল-মাহমুদ বলেন, ‘এ যেন রীতিমত কেয়ামত। একে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তার সাথে হচ্ছে ভারি বৃষ্টিপাত, এই অবস্থায় দুর্যোগ-কবলিত মানুষকে বাঁচাতে হবে।’
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ভূমিকম্পের এই বিপর্যয়ের প্রভাব পড়তে পারে ২৩ মিলিয়ন মানুষের ওপর। সংস্থাটির ধারণা, বেসামরিক ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার দিনের শুরুতে (ভাররাত) তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপে সিরিয়া সীমান্তের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর একই দিনে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন আঘাত হানে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) মতে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে আঘাত হানে প্রথম ভূমিকম্পটি।
শক্তিশালী এ ভূকম্পনের ধাক্কা টের পাওয়া গেছে সুদূর গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত। গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের ভূতত্ত্ব জরিপ বিভাগ এ তথ্য জানায়।
বেঁচে যাওয়া কয়েকজন জানিয়েছেন, কম্পন শেষ হতে পুরো ২ মিনিট লেগেছে। ৭.৫ মাত্রার দ্বিতীয় কম্পনটির কেন্দ্রস্থল ছিল কাহরামানমারাস।
এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বহু মানুষ; পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে।