১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

‘হিরো আলম’ টাইপের লোকদের কোন জবাবদিহি নেই

আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল

খবরে পড়লাম, হিরো আলমকে দেখতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও ভীড় করছে! আরও আগেই এ দেশে মানসিকভাবে অসুস্থদের একটি সমাজ তৈরি হয়েছে। একজন মানুষের ক্ষেত্রে প্রথম বিবেচ্য হচ্ছে – সে মানুষ হিসেবে কেমন! হিরো আলমের ক্ষেত্রে সে একজন নারীলোভী চরিত্রহীন লোক। আলমের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইভেন্ট সম্পর্কে তার ফ্যান-ফলোয়ারদের অবগত হওয়া প্রয়োজন।

আলমের প্রথম স্ত্রীর নাম সুমি।‌ ২০১২ সালে সুমির বোন তথা শ্যালিকাকে নিয়ে পালিয়ে গেলে শ্বশুর সাইফুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করে।‌ পরবর্তীতে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়।

মূলত নারীসঙ্গ পেতে চানাচুর বিক্রেতা থেকে শ্বশুরের অর্থে ডিশ‌ ব্যবসায়ী হওয়া আলম কাঁচা টাকা হাতে পেয়ে জনপ্রিয় হিন্দি/বাংলা গানের মিউজিক ভিডিও তৈরি শুরু করে। তার নায়িকারা কেউ টাকার বিনিময়ে, কেউ বিছানায় যাওয়ার শর্তে মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের সুযোগ পেত।

আলমের‌ বিরুদ্ধে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার অনেক অভিযোগ রয়েছে। মনি চৌধুরী নামে এক সংগীতশিল্পী প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। অভিনেতা চিকন আলীর গোপন ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায় করেছিল বলেও শোনা যায়।

আলমের বিরুদ্ধে বর্বরভাবে বউ পেটানোর অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে মিউজিক ভিডিও তৈরির জন্য সে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেছিল। শ্বশুর ধার করে ১ লাখ টাকা দেয়। বাকি টাকা দিতে না পারায় সুমিকে বেদম প্রহার করে এবং গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছিল। এ সময় স্ত্রীর বিরুদ্ধে উল্টো পরকীয়া করার অভিযোগ করে আলম। পরবর্তীতে আপস করে মামলা তুলে নেয়ায় আদালত ভর্ৎসনা করেছিল।

২০১৯ সালে নুসরাত নামের এক মডেলকে বিয়ে করে আলম। নুসরাত তার বিরুদ্ধে একাধিক মহিলার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক রাখার অভিযোগ তুলেছিল। প্রথম স্ত্রীর মতো তাকেও অকথ্য গালিগালাজ ও মারধর করতো সে। এছাড়া সংসার থাকা অবস্থায় স্ত্রীর গোপন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে আলমের বিরুদ্ধে মামলা করে নুসরাত ও পরবর্তীতে তাকে তালাক দেয়।

সাংবাদিক আকাশ নিবিড় অভিযোগ করেন, ভিডিওর মাধ্যমে আয়ের লোভ দেখিয়ে তার কাছে দেড় লাখ টাকায় একটি ইউটিউব চ্যানেল বিক্রি করে হিরো আলম। আয় না হওয়ায় হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করে ও থানার ভেতরেই দুজন মারামারি করে পত্রিকার শিরোনাম হয়। আলমকে প্রতারক আখ্যা দিয়ে আকাশ জানান, অনেকের কাছ থেকেই এভাবে টাকা নিয়েছে হিরো আলম। এছাড়া নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে ব্ল্যাকমেইলের শিকার অনেকে আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মিডিয়ার সামনে আসতে চায় না।

গরীব, অবহেলিত, দেখতে খারাপ – এসব কথায় সহানুভূতি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি কাজেই সাফল্য পেতে নির্দিষ্ট যোগ্যতা প্রয়োজন। অভিনেতা হওয়ার জন্য সুদর্শন হওয়া আবশ্যক না হলেও নায়ক হতে মিনিমাম কিছু যোগ্যতা প্রয়োজন। কৌতুকাভিনেতা হওয়া ছাড়া আর কিছুতেই আলম ফিট নয়। যারা তাকে ভালো মানুষ বলে, তাদের বিবেচনা করা উচিত যে, আলম তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করে নানা ধরনের অপকর্ম করেছে। সুযোগ পেলে কি করবে না! সবচেয়ে বড় কথা হিরো আলম টাইপের লোকদের জবাবদিহি করার কোনো উপায় নেই। কোনো অভিযোগেই তাদের সম্মান কমে না বা বাড়ে না। এমন একজন লম্পটের জন্য আমাদের জনগণ মুখিয়ে আছে ভাবা যায়!

সর্বশেষ নিউজ