নেত্রকোনার পূর্বধলায় রাতের আঁধারে একটি ফিশারিতে বিষ প্রয়োগে কোটি টাকার মাছ নিধন করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে মাছের পাশাপাশি নানা জলজ প্রাণীও মরে ভেসে উঠছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করেছেন।
সোমবার দুপুরে পূর্বধলা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এরআগে রোববার সকালে উপজেলার নারায়ণডহর গ্রামে রোকেয়া ফিশারিতে এ বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে। তবে সোমবার পর্যন্ত মাছ মরা অব্যাহত আছে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বধলা উপজেলার নারায়ণডহর গ্রামে পাঁচ একর জমিতে ‘রোকেয়া ফিশারিজ’ নামে একটি ফিশারিজ দেন স্থানীয় মৎস্য আশরাফুল কবির তুষার। এতে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ অনেক ধরণের দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ করেন। পোনা মাছ ছাড়া থেকে শুরু করে এসবের খাবার দাবাড় ও শ্রমিকের ব্যয়সহ ৩২ লাখ টাকা খরচ হয়। বর্তমানে এই ফিশারির একেকটি মাছ ৫ কেজি থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত ওজনের হয়েছে। মাছগুলো তুলে বিক্রি করার মতো উপযোগী হয়েছে। এতে কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা যেত বলে জানা গেছে।
এমন সময় রোববার সকাল থেকে ফিশারির মাছগুলো মরে ভাসতে শুরু করে। এ দুই দিনে হাজার হাজার মাছ মরে ভেসে উঠেছে। ফিশারিতে রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা বিষ দিয়েছে বলে ধারণা করছেন চাষী তুষার। নিজের পরিশ্রম ও সবটুকু সঞ্চয়ে গড়া ফিশারির বড় বড় মাছ চোখের সামনে মরে ভাসতে দেখে হতবাক হয়ে পড়েছেন ফিশারির মালিকসহ স্থানীয়রা। পুরনো শত্রুতার জেরে প্রতিবেশী শহীদ মিয়া এ কাজ করেছে বলে ধারণা মালিক তুষারের। ফিশারির পাশে মুদির দোকান রয়েছে শহীদের। এ ঘটনায় ফিশারির মালিক থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামান আজাদ বলেন, তুষায় তারঁ জীবনের সবটুকু সঞ্চয় ব্যয় করে এই ফিশারিটা গড়ে তুলেছেন। এতে এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। অনেক মানুষ আছে কোন কাজ করতে চায় না। তুষারের এই ভালো উদ্যোগটা হয়তো তাদের ভালো লাগেনি। এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
মৎস্য চাষী আশরাফুল কবির তুষার বলেন, জীবনের সবটুকু সঞ্চয় ব্যয় করে শ্রমে-ঘামে এই ফিশারিটি গড়ে তুলেছি। মাছগুলো বড় হয়েছে, বিক্রির উপযোগী হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে তুলে বিক্রি করবো ভাবছিলাম। বড় রুই-কাতলাগুলো কোনটা ৫ কেজি, কোনটা আট কেজি পর্যন্ত হয়েছে। দেশী মাছগুলোও ভালো বড় হয়েছে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি ফিশারির মাছ মরে ভাসতে শুরু করে। আজ সোমবারও হাজার হাজার মাছ মরে ভেসে উঠছে। প্রতিবেশী শহীদ মিয়ার সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সেই আমার ফিশারিতে রাতের আঁধারে বিষ দিয়েছে বলে ধারণা করছি। এ কাজ তারই হবে।
তুষার আরও জানান, এ ফিশারিতে ৩২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এতে কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা যেত। চোখের সামনে তিলে তিলে গড়া স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিছুই করার নেই শুধু বসে বসে দেখছি। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত শহীদ মিয়া বলেন, গতকাল রোববার বিকেলে এ ঘটনায় এলাকায় একটি সালিশ হয়েছে। সালিশে স্থানীয়রা আমাকে অভিযুক্ত করেছে। কিন্তু এই ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই। অযথা আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।