ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র আমীর মুফতি পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে।দেশের চলমান অস্থিরতা নিরসনের একমাত্র পথ হলো ইসলামকে বিজয়ী করা। এ লক্ষ্যে সব ইসলামী দলের সমন্বয়ে মজবুত ইসলামী পস্নাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।
সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক চরমোনাইর বার্ষিক মাহফিল স্টেজে আয়োজিত ওলামা ও সুধী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
চরমোনাই পীর বলেন,দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে যারা রাজনীতি করেছে তারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও ঐক্য-সংহতি প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করেনি। এমন অবস্থায় নীতি ও আদর্শের ক্ষেত্রে অটল থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩৫ বছর ধরে দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে।
মাহফিলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ওলামায়ে কেরাম যে যে পস্নাটফর্মে থেকে ভালো কাজ করছে আমাদের সবার উচিত সেই ভালো কাজের প্রশংসা করা। ওলামায়ে কেরামের চোখ কান খোলা না থাকলে উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যাবে। বর্তমান সরকারের ওপর সওয়ার হয়ে একদল নাস্তিক সিলেবাসের মাধ্যমে জাতিকে নাস্তিক বানানোর পঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বলেন,ওলামায়ে কিরাম ঐক্যবদ্ধ হলে এধরণের যেকোনো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়া যাবে।
দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, আমরা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বদলীয় জাতীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি শান্তি প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে পারলেই কেবল আমরা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো।
ওলামা সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শায়খ জাকারিয়া রহ. ইসলামী রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, অতীতের ওলামাদের মিমাংশিত বিষয় যেমন- আক্বিদা,আমল ও রাজনীতির বিষয়ে নতুন কিছু মানা যাবে না। চরমোনাই বুজুর্গরা যেভাবে চলছেন এইভাবে কাজ চলতে থাকলে একসময় ঐক্য হয়ে যাবে।
ঢালকা নগরের পীর সাহেব মাওলানা জাফর আহমদ বলেন, ঐক্য করতে হবে কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে। শরীয়তের সাথে ঐক্য না হলে কাজ হবে না। এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আলেম ওলামাদের কাজ শুধু মসজিদে মাদরাসায় নয়, দেশের কোন সেক্টর কোথায় কিভাবে চলবে তার নির্দেশ দেয়া ও দেখা শোনা করা তাদের দায়িত্ব।
ওলামা সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আক্কাস আলী সরকার, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. বেলাল নুর আজিজী, খুলনা দারম্নল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওঃ মোশতাক আহমেদ , জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব জোবায়ের আহমেদ, মুফতী মুহিবুলস্নাহ , ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিশিষ্ট আলেম মাওঃ ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক, ভারতের দারম্নল উলুম দেওবন্দ এর সিনিয়র শিক্ষক আল্লামা শাহ আলম, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. ফারম্নখ আহমেদ, মুফতী হাফিজুর রহমান গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী গোলামুর রহমান, হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতী মাওঃ জোনায়েদ বিন জালাল, মাওঃ ইসমাইল মাদানী, মাওঃ আকরাম হোসেন, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওঃ শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওঃ ইমতিয়াজ আলম, মাওঃ আশিকুল্লাহ, শায়খুল হাদীস মুফতী আজিজুল হক, মাওঃ হোসাইন আহমেদ,জাতীয় দ্বীনি শিক্ষা বোর্ডের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি তাজুল ইসলাম, মুফতী মজিবুর রহমান, মাওঃ ইকবাল সিরাজী, মুফতী ওমর ফারম্নক, মাওঃ আনোয়ার বিন মুসলিম, মুফতী লিয়াকত আলী, মাওঃ আবদুর রাজ্জাক কাসেমী, মাওঃ হারুনুর রশিদ কাসেমী, মুফতী রেজওয়ান রফিকী, মুফতী রেজাউল করীম আবরার, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, শ্রমিক আন্দোলন সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা খলিলুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন ওমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাওঃ মীর আহমদ মিরম্ন, কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুল বাতেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মাওলানা বজলুর রহমান খান, ফেনী ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মুফতী ইউসুফ কাসেমী এবং ছাত্র নেতা শরিফুল ইসলাম রিয়াদ।
আগামী শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় চরমোনাই পীরের আখেরি বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
এদিকে, চরমোনাই মাহফিলে আসা মুসল্লীদের মধ্যে ৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। চরমোনাই মাহফিল হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তারা হলেন- নওগা সদরের আব্দুর রহমানের পুত্র হারুনুর রশীদ, ময়মনসিংহ ফুলপুরের লিয়াকত মন্ডলের ছেলে মোঃ সাদেক মিয়া, গোপালগঞ্জ মোকসেদপুরের মৃত তোফাজ উদ্দীন শেখের ছেলে মোঃ রওশন শেখ ও জামালপুর মাদারগঞ্জের মৃত মাহামুদ মুন্সীর ছেলে মোঃ জামাল উদ্দিন।
তাদের নামাজে জানাজা শেষে মরদেহ স্বজনদের নিকট পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।