১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার

এক নারী সাংবাদিককে ৮ বার সময় দিয়েও কেন ইন্টারভিউ দেননি রাজেশ খান্না?

আরিয়ান স্টালিন
spot_img
spot_img

এক নারী সাংবাদিককে ৮ বার সময় দিয়েও কেন ইন্টারভিউ দেননি রাজেশ খান্না?

রাজেশ খান্নাকে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের সর্বকালের সেরা হিট নায়ক বলা হয়।

সেই রাজেশ খান্না ছিলেন বাস্তবে অসম্ভব উদ্ধত ও রূঢ়ভাষী এবং অহংকারী।.. রাতের পর রাত পার্টি, অজস্র পয়সা খরচ করা তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।

টিস্যু পেপারের মত এই নায়ক বহু মানুষের কেরিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছেন স্রেফ “মজা” করতে গিয়ে..।

একজন মহিলা সাংবাদিককে আটবার সময় দিয়েও ইন্টারভিউ দেননি। ডেড লাইন পেরোনোর একটু আগে যখন ইন্টারভিউ দিতে রাজী হলেন সেদিন ঘটল চরম এক ঘটনা..

ঝাড়া চার ঘণ্টা বসিয়ে রেখে সেই সাংবাদিককে উদ্ধত নায়ক… এক প্রতিনিধির মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে বলেছিলেন -” ইন্টারভিউ হবে না ” নিজে নেমে এসে বলার সৌজন্য টুকুও দেখাননি।

ক্লান্ত, বিধ্বস্ত মহিলা সাংবাদিকটি যখন চাকরি হারানোর ভয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছেন.. তখন কান্নার আওয়াজে ছুটে এসেছিলেন রাজেশ খান্না। হা হা করে ঘর ফাটিয়ে হেসেছিলেন সেদিন সুপারস্টার। মহিলার কষ্ট দেখে হেসে কুটি কুটি হয়েছিলেন ফ্যানেদের প্রিয় “কাকা”।

রাজেশ খান্নার বাংলো “আশীর্বাদ”-এ রোজ মদ, জুয়ার আড্ডা বসত। আড্ডার সদস্যরা বেশিরভাগই চাটুকার, অর্থ লোভী বন্ধু, বি গ্রেড ছবির পরিচালক।

থাকতো তখনকার পাঞ্জাবী বা তামিল ছবির নাম না জানা পরিচালক। প্রতি রাতে ছুটত সেখানে মদের ফোয়ারা। রঙে রঙ মিলিয়ে টাইলস বদলানো হতো বাড়ীটিতে প্রতি সপ্তাহে।

ডিম্পল বেশিদিন সহ্য করতে পারেননি এসব। চরম অশান্তির পর দুই মেয়ের হাত ধরে যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন ডিম্পল “আশীর্বাদ” ছেড়ে। সংসার ছেড়ে..একটি বারের জন্য ফিরেও তাকাননি রাজেশ খান্না।

বন্ধুরূপী চাটুকাররা গ্লাসে মদ ঢেলে বরফ মিশিয়ে পেগ বানিয়ে বলেছিল-“আরে কাকা তুসি তোপ হো, জানে দো শালী কো.. এক ডিম্পল জায়েগি দশ ডিম্পল আয়েগি…”!

স্থায়ী হয়নি এসব স্বেচ্ছাচারিতা। কালের নিয়মে বাজার পড়তে থাকে এই সুপারস্টারের। যে সুপারস্টারের বিয়ের খবর শুনে মহিলারা আত্মহত্যা করেছিলেন। যে সুপারস্টারের গাড়ীর ধুলো নিয়ে সিঁদুর পরতেন মেয়েরা।, যাঁর গাড়ি রাস্তায় পার্ক করলে, গাড়ির বনেটে লিপস্টিক মাখা ঠোঁটে অজস্র চুমুর দাগ এঁকে যেতেন মেয়েরা।, সেই নায়কের একের পর এক ছবি ফ্লপ হতে থাকে। প্রডিউসাররা লগ্নী করতে নারাজ হন রাজেশ খান্নার উপর।

ধীরে ধীরে ডুবে যান বলিউডের একসময়ের সম্রাট। যে বাড়ির গেটের সামনে ভিড়ের চাপে রাস্তা দেখা যেত না.. সেখানে একজনও ছিল না দাঁড়িয়ে। কোন ফ্যান , সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার। কেউ নেই..কোথাও।

শেষ বয়সে একাই গেট খুলে বেরিয়ে বোম্বের “বেস্ট” লেখা বাস গুলোর দিকে তাকিয়ে হাত নাড়তেন। একজন নায়ক যিনি হেরে গেছেন।

যিনি একবার হাত নেড়ে দিলে জনসমুদ্র হয়ে যেত। মহিলারা অজ্ঞান হয়ে যেতেন বিস্ময়ে।

তার শেষ সময়ে কেউ ছিল না কোথাও।

শেষ বয়সে এক বন্ধু কে একদিন ফোন করে প্রবাদ প্রতিম এই নায়ক আফসোস করে বলেছিলেন-” অব মুঝে কোই কুত্তা ভি ফোন নেহি দেতা”….

শেষ বয়সে দেনার দায়ে যখন একটু একটু করে ফুরিয়ে আসছেন রাজেশ খান্না.. তখন অমিতাভের হাতে ছবির বন্যা। প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনের অফার আসছে ঝড়ের মত।

সেই অমিতাভ বচ্চন.. যাকে একসময় ব্যঙ্গ করতেন রাজেশ খান্না।

জয়া বচ্চনকে এক পার্টি তে ডেকে রাজেশ বলেছিলেন-” ওই লম্বুটার সঙ্গে থাকো, কি করে..? তোমার কি মনে হয়.. ও কোনদিন সুপারস্টার হবে?”…

রাজেশ খান্না “আশীর্বাদ”-এ বসে “আনন্দ” করতে গিয়ে আসলে টেরই পাননি একজন লম্বা লোক এসে পুরো সাম্রাজ্য ছিনিয়ে নিয়ে চলে যাবে।

ক্লান্ত, বীতশ্রদ্ধ, হেরে যাওয়া নায়ক যখন প্রয়াত হলেন , তখন স্বজন বলতে কেউ ছিলো না পাশে। ওদিকে গয়নার বিজ্ঞাপনে হাসি মুখে পাশাপাশি অমিতাভ-জয়া।

শেষ বয়সে রাজেশ খান্না চরম একাকিত্ব অনুভব করেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন।

“সব পাখি ঘরে ফেরে…. ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন”…

এই গল্প কোন বিশেষ কাউকে নিয়ে নয়…

এই গল্প… তারাদের ডুবে যাওয়ার গল্প।

সর্বশেষ নিউজ