পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার পংক্তিগুলো বাস্তবে রূপ নিতে বাকি রয়েছে মাত্র কয়েক মাস। তবে সুখের ঘ্রাণ বইতে শুরু করেছে আম গাছে। মানিকগঞ্জের উপজেলাগুলোতে আম গাছে ফুটেছে মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আমের মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। মুকুলের পরাগ রেনুকে ঘিরে মৌমাছিরা ভিড় করছে আম গাছের ডালে ডালে। পাশাপাশি মধু মাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে আমের মুকুল।
কিছুদিনের মধ্যে প্রতিটি গাছ ভরে যাবে গুটি আমে। মৌমাছিরা ব্যস্ত মধু সংগ্রহে। ফাগুনের ছোঁয়ায় পলাশ, শিমুল বনেও লাল রঙের ছোঁয়া লেগেছে। রঙিন ফুলের সমারোহে প্রকৃতি যেন সেজেছে বর্ণিল সাজে। গাছ ভরা মুকুল দেখে আশায় বুক বেঁধেছে মানিকগঞ্জের চাষিরা। বাড়ীর ওঠানের প্রতিত জায়গাসহ বাড়ির ছাদেও টপ দিয়ে আম গাছ বপণ করছেন সৌখিন চাষিরা। অন্যান্য ফলের তুলনায় আম চাষ বেশ লাভজনক। তাই বাণিজ্যিকভাবে অনেকেই আম চাষ শুরু করেছেন। প্রতি বছর বাড়ছে আমের বাগান।
মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় গত দু’দিন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি আম গাছে শোভা পাচ্ছে মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। মুকুলের মো মো গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত মানিকগঞ্জের প্রকৃতি।
আমের ভালো ফলন নির্ভর করে প্রকৃতির ওপর। অনুকূল আবহাওয়া আর আমের মুকুল ঝরে পরা রোধ করাটা খুবই জরুরি বলে জানান চাষিরা। আমের গুটি ধরে রাখা গেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মানিকগঞ্জের নয়াডিঙ্গি এলাকার ব্র্যাক নার্সারির মো. হুমায়ুন জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাদের নার্সারি ও বাগানে লাগানো আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে।
হুমায়ুন আরও বলেন, ‘মুকুল আসা ও ফল ধরার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাঙিক্ষত ফলন পেতে এ সময় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আম গাছে সঠিক সময় ও সঠিক মাত্রায় সার, সেচ, পোকা-মাকড় ও ছত্রাকসহ রোগবালাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিলে আমের ফুল ও গুটি ঝরা রোধ করা যায়।’
সাটুরিয়া উপজেলার গোলড়া এলাকার আম ব্যবসায়ী হারুন জানান, এবার তিনটা বাগান কিনেছেন। শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগানে ভালো মুকুল এসেছে। আশা করছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে মুকুল আসবে। গাছে গোধ হরমন জাতীয় কীটনাশক দিয়েছেন, যাতে মুকুলগুলো নষ্ট না হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘মানিকগঞ্জে চাষিদের মধ্যে বাণিজ্যিকভিত্তিতে আম উৎপাদনের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। খরচের তুলনায় অধিক লাভ এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি আম বাগানের রয়েছে নিজস্ব একটা সৌন্দর্য।’
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের আমচাষি কামরুল বলেন, ‘কিছু আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এখন গাছের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। বাগানের আগাছা পরিষ্কারসহ পোকা দমনের জন্য স্প্রে করা হচ্ছে। এতে পোকা যেমন দূর হবে, তেমনি গাছে দেখা দেবে স্বাস্থ্যকর মুকুল। এর ফলে ফলনও ভালো হবে।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ জানান, জেলায় অনেক নতুন আমের বাগান হয়েছে। এ বছর আম গাছগুলোতে অনেক মুকুল এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময় মতো পরিচর্যা করা হলে চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলন হবে।
এ জেলার আমচাষীরা আশায় বুক বেঁধে গাছের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। তাদের আশা, চলতি মৌসুমে তারা আম থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।