১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার

মিলেছে নতুন ৬ কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধান, গ্রেফতার ৩৭

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img
spot_img

 

রাজধানীতে প্রতিদিনই নতুন নতুন কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। এসব গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযানে চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় এমন ছয়টি গ্রুপের সন্ধান মিলেছে ঢাকা সিটির উত্তরের এলাকাগুলোতে। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) অভিযান চালিয়ে এসব গ্রুপের ৩৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

প্রতিটি গ্রুপের আনুমানিক সদস্য ১০ থেকে ১৫ জন। তারা টাকার বিনিময়ে মারামারি, দখলবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবকে তারা জানিয়েছে, তাদের  বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র, ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

 

রাজধানীর বনানী, মহাখালী, উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে ০০৭, বাবা, ডি কোম্পানি, জাউরাগ্রুপসহ ছয়টি কিশোর গ্যাং গ্রুপের দলনেতাসহ ৩৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। স্থানীয় বিভিন্ন ‘বড়ভাইদের’ হয়ে এই কাজ করত তারা।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন— রাসেল (১৭), আরাফাত (১৭), রবিন (১৫), আল-আমিন (২৪), ইসলাম (২৯), জুয়েল (২২), রবিউল (১৬), মুরাদ (১৭), মাহাবুব (১৯), সাদ (২২), রোহান (২২), মনা (২৮), হৃদয় (২০), ওবায়েদ (১৮), জিসান (১৯), আকাশ (৩০), ঈমন (২০), রমজান (২১), সজিব (১৮), শাকিব (২২), রাজিব (১৯), আমির হোসেন (৩৬), শাহজাহান সাজু ওরফে রাসেল (৪৫), জিলাদ মিয়া (২০), রিদয় (১৯), আ. রায়হান (১৫), বাবু মিয়া (২২), শাহজাহান (২১), জালাল মিয়া (২৮), লামিম মিয়া (১৫), রাকিব (১৬), হিরা মিয়া (১৭), ইমরুল হাসান (১৭), সাকিন সরকার রাব্বি (১৮), সুজন মিয়া (১৯), খাইরুল (১৯) ও রাহাত (১৯)।

এসময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম গাঁজা, ২৪টি মোবাইল ফোন, একটি ব্লেড, একটি কুড়াল, একটি পাওয়ার ব্যাংক, পাঁচটি রড, ১৬ টি চাকু, তিনটি লোহার চেইন, একটি হাতুড়ি, একটি উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করা মোটরসাইকেল এবং নগদ ২৪ হাজার ২৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

রাজধানীর উত্তরায় র‍্যাব-১ কার্যালয়ে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোসতাক আহমেদ।

র‍্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং, গ্যাং কালচার, উঠতি বয়সী ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিনত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোট খাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর মারামারি করে। এছাড়াও তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে তাদের বিশৃঙ্খলায় কেউ প্রতিবাদ করলেও খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর মহাখালী, বনানী, বিমানবন্দর, টঙ্গি ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক অভিযানে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘০০৭ গ্রুপের দলনেতা আল-আমিন, জাউরা গ্রুপের দলনেতা মাহাবুব, বাবা গ্রুপের দলনেতা সাদ, ভোল্টেজ গ্রুপের- মনা, ডি কোম্পানি র দল নেতা পাপ্পু ওরফে লন্ডন পাপ্পু, তার অন্যতম দুই সহযোগী আকাশ ও আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর গ্রুপের দলনেতা বয়রা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব-১ অধিনায়ক মোশতাক আহমেদ বলেন, প্রতিটি গ্রুপের আনুমানিক সদস্য ১০ থেকে ১৫ জন। তারা টাকার বিনিময়ে মারামারি, দখলবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবকে তারা জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র, ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

কিশোর গ্যাং গ্রুপের মদদদাতা কারা, তাদের লাভ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, কিশোর গ্যাং গ্রুপের দলনেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কিশোর বয়স, ফলে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে এটা তারা করে। বিশেষ করে কিছু ব্যক্তি তাদের ব্যবহার করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা মদদদাতাদের হয়ে মারামারি করে। অনেকেই এই গ্রুপের সদস্যদের মূলত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের হয়ে কাজ করার কারণে অপরাধ করে সেল্টার পায়। যারা তাদের নানাভাবে মদদদাতা হিসেবে কাজ করে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, গণমাধ্যমের সংবাদ ও র‍্যাব সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করি। আগেও এভাবেই অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‍্যাব-১ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আগে অনেকের নাম পেয়েছি। তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এখন কিশোর গ্যাং নিয়ে নির্দেশনা পাওয়ার পরে গত ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে কাজ করেছি। এই সময়ে নতুন গ্রুপগুলোকে দলনেতাসহ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কার্যক্রম, মামলাসহ তাদের বিষয় অনুসন্ধান করি। আমাদের অভিযান থেমে নেই। নতুন করে কোনো গ্রুপের তথ্য পেলে গ্রেপ্তার করা হবে।

কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতাদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে দেখা যায়। এই সব মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই অপরাধীদের কোনো দল বা ঠিকানা থাকতে পারে না। তাদের কোনো পরিচয় বিষয় না। তারা কার হয়ে কাজ করে সেটিও বিবেচ্য বিষয় নয়। কোনো অপরাধ করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়।

 

(এইদিনএইসময় /জাকারিয়া শুভ)

 

সর্বশেষ নিউজ