২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার

ভয়ের মধ্যে আছি, খুব সহজ অবস্থার মধ্যে নেই: ড. ইউনূস

ডেক্স রিপোর্ট
spot_img
spot_img

সম্প্রতি নিজের প্রতিষ্ঠান জবরদখল নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হুমকির অভিযোগ তুলে পুলিশের সহায়তাও চেয়েছিলেন। অন্যদিকে, পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়- সাতটি প্রতিষ্ঠান আইন মেনেই নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো ভয়ের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে ‘ডয়েচে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ অনুষ্ঠানে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে ভবিষ্যতে নিজের দেশে থাকা নিয়েও খোলামেলা কথা বলেন ড. ইউনূস।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীনের এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা ভয়ের মধ্যে আছি। আমাদের বিল্ডিংয়ের সামনে দলীয় একটা সভা, যেখানে আমাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে, ছাত্রদের নিয়ে এসে আমাদের ঘেরাও করে রাখছে, আমাদের বিল্ডিং ঘেরাও করে রাখছে। কাজেই আমরা খুবই সংকটময় অবস্থায় আছি- এটাই আপনাদের সবাইকে জানান দেয়া। আমরা খুব সহজ অবস্থার মধ্যে নেই।

ওই অনুষ্ঠানে ‘কর ফাঁকি’ নিয়ে আদালতের রায় ও কর পরিশোধের বিষয়েও বিস্তর আলোচনা করেন ড. ইউনূস। কর পরিশোধ না করে অনুদান দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার টাকা, আমি রোজগার করেছি। আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি কোনোকিছুর মালিক হবো না। কাজেই আমি টাকাটা যেহেতু উপার্জন করেছি, সেটা আমি একটা ট্রাস্টে দিয়ে দিতে চাচ্ছি। যেমন: আমার নিজের কোনো বাড়ি নেই, গাড়ি নেই, জমি নেই, ব্যবসার শেয়ার নেই। আমি এগুলো কোনোটা রাখিনি, মালিকানাবিহীন থাকতে চাই সবসময়। কাজেই এই টাকাটা আমি ট্রাস্টে দিয়ে দিচ্ছি।

তবে ট্রাস্টে দেয়ার সময় প্রশ্ন উঠলো- এটার কর দিতে হবে কি না। তখন আমাদের আইনজীবী বললো- জি না, এটা যেহেতু আপনি দান করছেন, এটা কর দেয়ার কোনো বিষয় না। আপনি তো দানই করে দিচ্ছেন। আমি বললাম, আইনে যেভাবে বলে সেভাবে করো, টাকা তো আমি এমনিই দিয়ে দিচ্ছি। কাজেই এটা সরকারকে দিলে আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি তো ধরে রাখতে চাচ্ছি না টাকাটা।

পরে আমরা একটা ফরম পূরণ করে দিয়ে দিলাম। তখন সরকারের পক্ষ থেকে, এনবিআর থেকে বলা হলো যে- না এটা করযোগ্য টাকা। আপনাকে কর দিতে হবে। আমাদের আইনজীবী বলছে দিতে হবে না, আর উনারা বলছে দিতে হবে। তখন আমি বললাম ঠিক আছে, আদালতের কাছে চাও। আদালত যেটা বলে সেটাই হবে।

নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, মূল জিনিসটা হলো- আদালতে গেছি আমি, সরকারের কেউ আমাকে আদালতে যাওয়ার জন্য বলেনি। আমিই আদালতে গিয়েছি তার একটা নিষ্পত্তি করার জন্য। এটা কি কর দিতে হবে, নাকি দিতে হবে না। তখন আদালত বিচার করে বললো- কর দিতে হবে। যেদিন আদালত বললো কর দিতে হবে, সেদিন আমরা কর দিয়ে দিয়েছি।

তিনি বলেন, কেউ আমাকে কর না দেয়ার অভিযোগ করেনি, কেউ আমাকে চিঠি লেখেনি- এমন কিছু না। ভাবখানা এরকম যে, আমি ধরা পড়ে গেছি, কর দেইনি। কাজেই এটার নোটিশ এসেছে। এরকম তো না, আমি নিজে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে গেছি, যেহেতু আমাদের উকিল বলছে এটা লাগবে না, আর সরকার বলছে লাগবে। আমি বললাম তাহলে এটা নিষ্পত্তি করার জন্য আদালতের কাছে পরামর্শ চাও।

ড. ইউনূস বলেন, আদালত পরামর্শ দিয়েছে- আপনাকে কর দিতে হবে। যেইমাত্র বলেছে, আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চেক আকারে দিয়ে দিয়েছি। এই টাকার প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। এই টাকা তো আমি ধরে রাখার জন্য দেইনি। আমি দান করে দিচ্ছি, ট্যাক্স দিতে হবে নাকি না- এটাই ছিল বিবেচ্য বিষয়। সেটা আমিই প্রার্থনা করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আমাকে একটা চিঠিও লিখেনি।

সম্প্রতি জনপ্রিয় হওয়া নিজের সামাজিক ব্যবসার মডেল ছাড়াও যে ব্যবসাগুলো করছেন, সেগুলো সমাজের কল্যাণে কেমন করছে- এসব বিষয় নিয়েও অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, আমি উৎসাহিতবোধ করি যেহেতু সারা দুনিয়া থেকে ব্যাপক সারা পাচ্ছি এটার জন্য। আজকে বাংলাদেশ হলো এটার কেন্দ্রভূমি। সবাই তাকিয়ে থাকে আমরা কি বলছি, কীভাবে করছি, আমাদের কথা, আমাদের কাজ অনুসরণ করে। পৃথিবীর সব দেশ এটাকে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে দেখে।

ড. ইউনূস বলেন, অনেকে বলে- আমার মনে হয় বড় একটা গ্রুপ আছে আমাকে প্রমোট করার জন্য, পরিচিতি বাড়ানোর জন্য। কিন্তু আমাদের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত নেই, কোনো কনসালটেন্সি ফার্ম নিয়োজিত নেই। আমরা যে কথাটা বলি, সেটা মনে লাগে, মনে দাগ কাটে।

ওই অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের মুনাফা দেয়া ছাড়াও নিজের স্পোর্টস অঙ্গনে জড়িত হওয়ার বিস্তারিত তুলে ধরেন ড. ইউনূস। এছাড়া দেশে থাকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই দেশের সন্তান, এই দেশেই থাকব।

সর্বশেষ নিউজ