২০ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবার

ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি, নিহত ১০৪

আন্তর্জাতিক ডেক্স
spot_img
spot_img

 

গাজায় গত চার মাসের বেশি সময় ধরে ইসরাইলি আগ্রাসন অব্যাহত আছে। চারদিক থেকে অবরূদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। হামলায় বাড়ি-ঘর থেকে শুরু করে সরকারি অবকাঠামো কোনো কিছুই বাদ যায়নি। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং আশ্রয়কেন্দ্রকেও ছাড় দেয়নি ইসরাইল। এই পরিস্থিতিতে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে দুর্ভিক্ষ। খাবারের জন্য চারদিকে কেবলই হাহাকার। ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে একটু ত্রাণের খাবারের আশায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু ইসরাইলের নিষ্ঠুর বাহিনী এসব মানুষদেরও ছাড় দেয়নি। প্রকাশ্যে গুলি করে শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০৪ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে ৭০০ জন আহত হয়েছেন।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি একটি ঠান্ডা মাথায় ‘গণহত্যা’ ছাড়া আর কিছুই নয়।

বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার একমাত্র উপায় হিসাবে যুদ্ধবিরতি জারির জন্য জরুরি হস্তক্ষেপ করতে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

 

যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। অথচ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে বারবার ভেটো দিয়ে আসছে দেশটি। বিশ্ব নেতারা এই ভেটোকে গণহত্যার লাইসেন্স হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর ইসরাইলি সেই কাজটিই আন্তর্জাতিক চাপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ত্রাণের বহরে হামলা খুবই আশ্চর্যজনক ঘটনা। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

 

নিষ্ঠুরতাকেও হার মানায় যে হামলাগাজায় যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষন নেই। ইসরাইলি সেনার সঙ্গে হামাসপন্থীদের যুদ্ধে গাজার সাধারণ মানুষের অবস্থা সঙ্গীন। যুদ্ধবিরতি কবে আবার ঘোষণা হবে, সেই দিনের প্রতীক্ষায় সবাই। অন্য দিকে, তীব্র খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন গাজার মানুষেরা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে স্পষ্ট উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খাবারের ঘাটতি এতটাই যে, কয়েক দিনের মধ্যেই এখানকার বাসিন্দাদের অনাহারে থাকতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। কিন্তু ইসরাইলি সেনার নিষেধাজ্ঞার কারণে মাস খানেক হয়ে গেল উত্তর গাজায় ‘মানবিক সাহায্য’ পৌঁছচ্ছে না। ঠিক সেই মুহূর্তে গতকাল গাজার আল রশিদ স্ট্রিটে খাবারের ট্রাকের সামনে কয়েকশ’ মানুষ অপেক্ষমান ছিলেন। এরই মধ্যে আকস্মিকভাবে ইসরাইলি বাহিনী সেখানে প্রকাশ্যে গুলি চালায়। অধিকাংশই গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কয়েকজন মানুষের পায়ের চাপায় প্রাণ হারান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোট ১০৪ জন নিহত হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

কামাল আদবান হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের প্রধান ফেয়ারস আফানা জানিয়েছেন, তারা এসে দেখেন যে, রাস্তায় মরদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের শরীরে গুলির চিহ্ন। কিছু আহত মানুষকে গাধার গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কারণ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সংকট বাড়ছে। ৩১ বছর বয়সী আহমাদ জানান, স্থানীয় সময় ভোর চারটায় ত্রাণের ট্রাকটি রাস্তায় আসে। তিনি জানান, সবাই যখ ট্রাকের কাছে যাচ্ছিল তখনই ইসরাইলি বাহিনী সরাসরি তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আহমাদ জানান, এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ইসরাইলি সেনা। কারো মাথায়, কারো পায়ে গুলি লাগে। তার চোখের সামনেই অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কামাল আবু নাহেল নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, খাবার নিতে গিয়েই যদি আমাদের প্রাণ যায়, তাহলে এমন খাবার না দেওয়াই ভাল। ক্ষুধার্ত শিশুদের বাঁচাতে খাবারের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে আমাদেরকে। অথচ শিশুরা তো খাবার পাচ্ছেই না, বরং আমাদেরই হত্যা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অক্সফাম জানিয়েছে, তারা এই ঘটনা দেখে বিস্মিত এবং ব্যথিত। ইসরাইল বরাবরই বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লংঘন করছে। সংস্থাটি জানায়, গণহত্যার ঝুঁকিটি বাস্তব। আম্মার হেলো বলেন, আহত হলেও আবার আমাকে ত্রাণের জন্য যেতে হবে। কারণ আমার বাচ্চাদের বাঁচাতে হবে, ঘরে রুটি ময়দাসহ কোনো খাবারই নেই, এমনকি পশুর খাবারও। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এর চেয়ে যদি আল্লাহ একটা ভয়াবহ ভূমিকম্পও দিতো তাও ভাল হতো আমাদের জন্য। গতকালে হত্যাকান্ডের মাধ্যমে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে।

 

যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় বড় ধাক্কা: হামাসহামাসের সিনিয়র নেতা ইজ্জাত আল রিশেক জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান যে প্রচেষ্টা চলছে তাতে বড় ধাক্কা দেবে ইসরাইলের এই হামলা। তিনি বলেন, আমাদের নাগরিকদের ওপর যদি এভাবে নৃশংস হামলা চলতে থাকে তাহলে আমরা জিম্মি মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো আলোচনায় যাবো না। এদিকে রমজানের প্রথম দিনেই ফিলিস্তিনিদের জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ যাওয়ার ডাক দিলেন হামাস নেতা হানিয়া। জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে হারাম আল-শরিফ কমপ্লেক্সের একটা অংশে আছে আল-আকসা মসজিদ, যা মুসলিমদের কাছে অন্যতম পবিত্র স্থান। এই জায়গাটিকে টেম্পল মাউন্ট বলা হয়, যা ইহুদিদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র এলাকা। ইসরাইলের সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামাস নেতার মন্তব্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তার অভিযোগ, এভাবে লড়াইটা অন্য ফ্রন্টেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, ইসরাইল যেন মুসলিমদের রমজানে আল-আকসা মসজিদে প্রার্থনা করতে দেয়।

 

-মিডল ইস্ট আই ও ডয়চেভেলে

 

(এইদিনএইসময় /জাকারিয়া শুভ)

 

সর্বশেষ নিউজ