৯ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার

‘স্বাস্থ্য সেবায় দরিদ্র জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে সরকারের বরাদ্দ অপর্যাপ্ত’

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img
spot_img

দেশের দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবার মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি সুবিধার ২০ শতাংশও ভোগ করতে পারে না। দরিদ্র জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের সম্পদ বরাদ্দও অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে দেশের স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে এসডিজি অ্যাকশন এলায়েন্স।

রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার অধিকার প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের অবস্থানপত্র শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ পরামর্শ দেওয়া হয়।

এসডিজি অ্যাকশন এলায়েন্সের কনভেনর আব্দুল আউয়াল লিখিত বক্তব্যে এসব পরামর্শ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, কোভিডের আগের ধারাবাহিকতায় বাজেটে স্বাস্থ্যখাত অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। মহামারির সময়ই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছিল। কিন্তু এরপরও বাজেটে এই খাত প্রত্যাশিত মনোযোগ পাচ্ছে না। টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও বাজেট ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বরাদ্দ খুব একটা বাড়ছে না। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করে, যা বৈশ্বিক গড় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে অনেক কম। সবার জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের সক্ষমতা তৈরির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকরা নিজেরা সংস্থান করেন। বাংলাদেশের জনগণ তাদের স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ নিজেরাই সংস্থান করতে বাধ্য হয়। এটি অনেক পরিবারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক সঙ্কট এবং এটি মানুষের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবাকে বিলম্বিত করে। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে সুপারিশ ও করণীয় উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো—

১. বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করে, যা বৈশ্বিক গড় ৫ দশমিক ৯ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য সেবায় অভিগম্যতা সম্প্রসারণের জন্য স্বাস্থ্যে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো অপরিহার্য।

২. স্বাস্থ্যের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে খরচ কমানো: বাংলাদেশের নাগরিকরা তাদের স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭০ ভাগ নিজেকে ব্যয় করতে হয়। এটি অনেক পরিবারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক সমস্যা। এর কারণে প্রান্তিক মানুষের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা বিলম্বিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে অসুবিধাগ্রস্থ পরিবার টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচির আওতা প্রসারিত করে এবং স্বাস্থ্যসেবা খরচের জন্য ভর্তুকি প্রদান করে স্বাস্থ্যের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যয় কমাতে পারে।

৩. প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ: প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভিত্তি। এটি প্রতিরোধমূলক সেবা প্রদান, সাধারণ অসুস্থতার চিকিৎসা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অপরিহার্য। সরকার আরও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা তৈরি করে, আরও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ ও পরিষেবাগুলিকে আরও সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে।

৪. অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবায় প্রান্তিক মানুষের অভিগম্যতা বৃদ্ধি করা: প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতের মধ্যে আছে বিস্তৃত পরিষেবা, প্রতিরোধমূলক সেবা ও মাতৃস্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা পর্যন্ত। সরকার স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারিত করে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরিষেবাগুলিকে আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে তোলার মাধ্যমে ব্যক্তির আয় বা অবস্থান নির্বিশেষে সকল নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবায় অভিগম্যতা প্রসারিত করতে পারে।

৫. স্বাস্থ্যের সামাজিক সূচকগুলোকে চিহ্নিতকরণ: স্বাস্থ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয় না। এটি শিক্ষা, পুষ্টি ও স্যানিটেশনের মতো অন্যান্য বিষয় দ্বারাও প্রভাবিত হয়। সরকার সকল নাগরিকের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য শিক্ষা, কৃষি, এবং পানি ও স্যানিটেশনের মতো অন্যান্য সেক্টরের সাথে কাজ করে স্বাস্থ্যের সামাজিক নির্ধারকগুলির সমাধান করতে পারে।

(এইদিনএইসময়/বিজয়)

সর্বশেষ নিউজ