বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ফাইলেরিয়া নির্মূল এবং বিশ্বে প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে কালাজ্বর নির্মূল করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ৭৭ তম সাধারণ সভায় তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ হতে পারে একটি যথাযথ রোল মডেল। এটি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল রবিবার সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে তার ১৪—২৯ মে যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ডে সরকারি সফর নিয়ে নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
এ সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রী তার যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড সফরের বিভিন্ন দিক বিশদভাবে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্যভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন যুক্তরাজ্য সফরের প্রারম্ভে ১৪ মে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ প্রধান স্যার অ্যান্ড্রু পোলার্ডের সাথে একটি সভায় মিলিত হন এবং বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
এছাড়া তিনি হাউস অফ কমন্সে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও মাধ্যমিক পরিচর্যা বিষয়ক মন্ত্রী অ্যান্ড্রু স্টিফেনসনের সাথে বৈঠকের সময় দক্ষ নার্স এবং মিডওয়াইফ নিয়োগের আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের ডিজিটাইজেশন, তরুণ চিকিৎসকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং ওভারসিজ ডক্টরস ট্রেনিং স্কিমের পুনঃপ্রবর্তন যা বর্তমানে মেডিকেল ট্রেনিং ইনিশিয়েটিভ (এমটিআই) নামে পরিচিত এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের সাথে স্বাস্থ্য খাতের সহযোগিতা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।তিনি বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) এবং বিভিন্ন ব্রিটিশ রয়্যাল কলেজের মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বও তুলে ধরেন। মন্ত্রী অ্যান্ড্রু স্টিফেনসন মন্ত্রী সেনের উত্থাপিত সমস্ত পয়েন্ট নোট করেন এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে ডিজিটালাইজ করার জন্য বাংলাদেশকে সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। স্টিফেনসন মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনকে ডব্লিউএইচও-র লাল তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলে তা সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করার পরামর্শ দেন যাতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ থেকে দক্ষ নার্স নিয়োগ শুরু করতে পারে। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. সেন হাউস অফ কমন্সে যুক্তরাজ্যের ছায়া স্বাস্থ্য সচিব ওয়েস স্ট্রিটিং এমপির সাথে তার কার্যালয়ে দেখা করেছেন। তারা স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা করেন।
রয়্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের আমন্ত্রণে ১৬ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন যুক্তরাজ্য সরকার এবং রয়্যাল সোসাইটি দ্বারা আয়োজিত ” এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসষ্টেন্সের প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া” সম্মেলনে যোগদান করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রী এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসষ্টেন্স প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের সদিচ্ছা ও দৃঢ় অংগীকারের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে AMR বিষয়ক গ্লোবাল লিডারস ফোরামের কো চেয়ারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে যোগদানকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ২৫ মে সকাল সাড়ে ৮ টায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানোম গ্যাব্রেয়াসুসের সাথে দ্বিপাক্ষিক সভায় মিলিত হন। সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বিগত পনেরো বছরের অর্জন, করোনা অতিমারী মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমর্থন ও সহযোগিতা, দক্ষিণ পূর্ব এশীয় দেশ সমূহের আঞ্চলিক পরিচালক পদের নির্বাচনে সায়মা ওয়াজেদের বিপুল বিজয় ও অব্যাহত সহযোগিতার জন্য মহাপরিচালককে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ, ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট স্থাপন ও ভ্যাকসিন তৈরি, কমিউনিটি ক্লিনিককে জনস্বাস্থ্য সেবার মূল কেন্দ্রে রেখে অধিকতর শক্তিশালীকরণ, আউট অব পকেট এক্সেপেন্ডিচার কমানোসহ ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট অর্জনে স্বাস্থ্য খাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরো বেশি সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মহাপরিচালক বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বিপুল অর্জন ও উত্তম সেবা সমূহের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে তার দপ্তর থেকে সকল প্রকার সমর্থন ও সহযোগিতা দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. টেড্রোস আধানোম গ্যাব্রেয়াসুসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে আগ্রহের সাথে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং অবিলম্বে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের সাথে দ্বিপাক্ষিক এ সভার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যসেবায় সুফল বয়ে আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২৫ মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের হোটেল হিলটনে অনুষ্ঠিত ৩৬ তম কমনওয়েলথ স্বাস্থ্য মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় মাননীয় মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগসহ একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। কমনওয়েলথের মহাসচিব, রাইট অনার পাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড এবং সভাপতি হিসেবে ৩৬ তম কমনওয়েলথের বর্তমান চেয়ার, ডা: টিনটে আইওটিনটেং, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, কিরিবাতি যথাক্রমে স্বাগত ও উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা: সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অবস্থান, জাতীয় ও বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তিন দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
প্রথমত টেকসই ও জলবায়ু সহিষ্ণু স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে;
দ্বিতীয়ত রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি স্বাস্থ্য সেবায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জনস্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, সমন্বয় সাধন ও অধিকতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে;
তৃতীয়ত স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত জনবলের উপযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মান সম্মত সেবা নিশ্চিতকরণে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা, উত্তম চর্চা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় ইত্যাদি ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্টগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সমন্বয় বাড়াতে হবে।
‘All for Health, Health for All’ এই মূল প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ২৭ মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ৭৭ তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসেম্বলির পর্দা উন্মোচিত হয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ গ্রহণ করেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস আধানোম ঘেব্রেইসাস কোভিড অতিমারী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক অতিমারী মোকাবেলায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভ্যাক্সিন, মেডিসিন, থেরাপিউটিক প্রস্তুতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা তৈরি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি, ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণসহ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সূচক সমূহ অর্জনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ফাইলেরিয়া নির্মূল এবং বিশ্বে প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে কালাজ্বর নির্মূল করায় মহাপরিচালক তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ হতে পারে একটি যথাযথ রোল মডেল। এরপর মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয় SEAR সদস্য দেশগুলোর ডেলিগেটদের সম্মানে SEAR ও ইন্ডিয়ার যৌথ আয়োজনে এক উচ্চ পর্যায়ের ফর্মাল লাঞ্চ ইভেন্টে অংশ নেন। ইভেন্টে SEAR এর আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও অর্জনগুলো তুলে ধরেন। অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবর্গও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। একই দিনে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল Bill & Mellinda Gates Foundation, Scalling Up Nutrition (SUN) Coordinator ও Global Fund এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে ভিন্ন ভিন্ন দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। Gates Foundation বাংলাদেশে তাদের চলমান প্রকল্পে অর্থায়নের পাশাপাশি ৫ম সেক্টর প্রোগ্রামে সরকারকে সহায়তার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। SUN Coordinator এর সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে সংস্থাটির প্রধান মিস আফসান খান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে খর্বতা সহ অন্যান্য পুষ্টিহীনতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আসছে এবং দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি এই সাফল্যের জন্য আগামী নভেম্বরে রুয়ান্ডার অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের বেষ্ট প্র্যাকটিসগুলো তুলে ধরতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান। ২৮ মে World Health Assembly এর দ্বিতীয় দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বাস্থ্য মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত প্যানেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন, বাংলাদেশের পক্ষে ‘Country Statement’ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভিশনারী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। তিনি উল্লেখ করেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার মান ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ কমিউনিটি ক্লিনিক (শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ) স্থাপনে কৌশলগত বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে সরকার নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইপিআই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১০ টি রোগের বিরুদ্ধে টিকা প্রদান, গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী মাতৃস্বাস্থ্য সেবা বাড়ানোর ফলে বিগত ২০ বছরে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু রোধে দক্ষিণ- এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কারণে গড় আয়ু ১৯৭১ সালে ৫০ থেকে বেড়ে বর্তমানে তা ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। এবং স্বাস্থ্য খাতে এ সকল অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সূচক সমূহ অর্জনে বাংলাদেশে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মাননীয় মন্ত্রী তার বক্তব্যে কার্যকর বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার পরিধি ও মানোন্নয়ন, সকলের জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য উপায়ে মানুষের কাছে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় সকল সেক্টরের সহযোগিতায় একটি সমন্বিত স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি কার্যকর কারিগরি জ্ঞান ও টেকনোলজি ট্রান্সফারসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
এসেম্বলিতে ‘Country Statement’ উপস্থাপন করার পাশাপাশি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল একই দিনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দ্বি-পাক্ষিক ও সাইড মিটিং এ অংশ নেন। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশ সমূহে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসষ্টেন্সের বিরুদ্ধে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে জাপানের সরকারের আমন্ত্রণে একটি ব্রেকফাস্ট মিটিং এ অংশ নিয়ে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসষ্টেন্সের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছা, দৃঢ় অবস্থান, কার্যকরী পদক্ষেপসহ আন্তর্জাতিকভাবে নেতৃত্ব দেয়ার কথা পূণর্ব্যক্ত করেন। UNICEF এর ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক ডা: টেডের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল খাদ্যে সীসা সহ অন্যান্য কারণে শিশু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি মোকাবেলা ও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদের সাথে বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মহোদয় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অগ্রগতির চিত্র সহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরেন। আঞ্চলিক পরিচালক আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসষ্টেন্সের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরার বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়া তিনি ৭-১০ অক্টোবর, দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক কমিটির ৭৭ তম সভা বাংলাদেশে আয়োজনে সম্মত হওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে তা সফল করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেন। সাসাকাওয়া ফাউন্ডেশনের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মাননীয় মন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে লেপরোসী নির্মূলে ফাউন্ডেশনের সহযোগিতার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়ে তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসেম্বলির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য দ্বি-পাক্ষিক ও সাইড ইভেন্টে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব জনাব মো: জাহাঙ্গীর আলম, জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি জনাব সঞ্চিতা হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, যুগ্ম সচিব মো: মামুনুর রশীদ, পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) ডা: আফরিনা মাহমুদ সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব জনাব মো: জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জনাব মোঃ আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ( আর্থিক ব্যাবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগ) মোঃ আব্দুস সামাদ সহ প্রমুখ।
(নিজস্ব প্রতিবেদক/এইদিনএইসময়)