২০ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবার

ভাড়াটিয়া সেজে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক, এইদিন এইসময়
spot_img
spot_img
বহুল আলোচিত খুলনার বানরগাতী এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটিয়া ছদ্মবেশে গৃহে প্রবেশ করে অভিনব কায়দায় প্রতারণার মাধ্যমে মহিলাদের স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের অন্যতম মূলহোতা আলী হোসেন সহ ০২ জনকে নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।
গত ৩০ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ খুলনার বানরগাতী এলাকার একটি বাড়ী থেকে ভাড়াটিয়া সেজে বাড়ীর মালিকের স্ত্রীকে কৌশলে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়াও কমিল্লা, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটিয়া সেজে বাড়ির মহিলাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে অভিনব কায়দায় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার, টাকা-পঁয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। চাঞ্চল্যকর এমন একাধিক ঘটনায় দেশের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ জনগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এসকল বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র‌্যাব উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১, নরসিংদী এর যৌথ আভিযানিক দল নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন বাসাইল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে খুলনার বানরগাতী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাড়াটিয়া সেজে মহিলাদের সম্মোহন করে অভিনব কায়দায় তাদের নিকট হতে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের অন্যতম মূলহোতা ১। মোঃ আলী হাসান সোহেল (৫৫), পিতা- মৃত আঃ হাই, দাউদকান্দি, কুমিল্লা ও তার সহযোগী ২। মোছাঃ সালমা (৫৩), স্বামী- মোঃ ফারুক মিয়া, দাউদকান্দি, কুমিল্লা’দ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ০১টি স্বর্ণের চেইন, ২টি স্বর্ণের কানের দুল, ০১টি ইমিটেশন নেকলেস, প্লাস্টার মোম, ০২টি মোবাইল এবং নগদ ৫০০/- টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ভিকটিমের স্বামী আব্দুর রহমান এর খুলনার বানরগাতী এলাকায় ৫ম তলা একটি বাড়ি রয়েছে। উক্ত বাড়ির ৫ম তলায় একটি রুম ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেখে গত ২৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ০২ জন এসে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আলী হাসান সোহেল জানায় যে তিনি দীর্ঘ দিন প্রবাসে ছিলেন এবং বর্তমানে খুলনার মোহাম্মদ নগরে বাড়ি নির্মাণ করবেন বিধায় কয়েক মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবে। পরবর্তীতে বাসা ভাড়া চুড়ান্ত করে অগ্রিম ভাড়া বাবদ ২ হাজার টাকা প্রদান করে চলে যায়। ঘটনার দিন সকালে গ্রেফতারকৃত আলী হাসান সোহেল তার সহযোগী গ্রেফতারকৃত মোছাঃ সালমাকে নিয়ে ভিকটিমের ভবনের ৩য় তলায় আসেন। এসময় তাদের হাতে প্লাস্টিকের বালতিতে কিছু মাছ ও টুল ছিল। বাড়িতে এসে গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমকে জড়িয়ে ধরে খুব আন্তরিকতার সাথে কুশলাদি বিনিময় করতে থাকে।
এসময় ভিকটিমের স্বামী রুমের ভিতরে প্রবেশ করলে গ্রেফতারকৃত আলী হাসান সোহেল এর কথিত স্ত্রীর কৌশলে ভিকটিমকে ৫ম তলার একটি রুমে নিয়ে গিয়ে ভিকটিমের গলায় ও হাতে থাকা স্বর্ণালংকার পরিস্কার করে দেয়ার কথা বলে কৌশলে তা খুলে নিয়ে দ্রæত পালিয়ে যায়। একই কৌশলে খুলনার খালিশপুর, দৌলতপুর ও পশ্চিম বানিয়াখামার, কুমিল্লা, নরসিংদী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্রেফতারকৃতরা বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে এসে বাড়ির মহিলাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে কৌশলে স্বর্ণালংকার, টাকা-পঁয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। এছাড়াও গ্রেফতারকৃতরা যশোর ও চট্টগ্রামে একই কৌশলে প্রতারণার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল বলে জানায়। এভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বর্ণলাংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার একাধিক চক্র তাদের যোগসাজশে এই প্রতারণার কাজগুলো করতো বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়।
গ্রেফতারকৃত আলী হোসেন চক্রটির মূলহোতা। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৭/৮ জন। গ্রেফতারকৃত আলী হাসান ও তার মামী ৩-৪ বছর যাবৎ অভিনব কায়দায় মানুষের নিকট থেকে স্বর্ণালাংকার, টাকা-পঁয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে আসছে। গ্রেফতারকৃতরা বাসা ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি দেখে বিভিন্ন বাসায় গমন করে এবং স্বর্ণালংকার পরিহিত মহিলাদের টার্গেট হিসেবে নির্বাচন করে। গ্রেফতারকৃতরা বাড়ি ভাড়ার অগ্রিম টাকা দিয়ে যাওয়ার কিছু দিন পরে বাসায় নারিকেল, দুধ, তাজা মাছ, ফলমূলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উপহার হিসেবে নিয়ে আসে। এগুলো তাদের নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে বলে ভুক্তভোগীদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে সখ্যতা তৈরি করে। পরবর্তীতে স্বর্ণালংকার পরিষ্কার করে দেয়ার নাম করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অলঙ্কার নিয়ে শুরুতেই গ্রেফতারকৃতরা প্লাস্টার মোম দিয়ে গ্রেফতারকৃতদের কাছে থাকা ইমিটেশনের স্বর্ণালংকার পরিষ্কারের অভিনয় করে এবং তাদের স্বর্ণের দোকান আছে বলে ভুক্তভোগীদের জানায়। পরবর্তীতে একটা বালতিতে রিঠা ফল ভেজানো ফেনাযুক্ত পানিতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি প্লাস্টার মোমের দলা রাখা থাকে যা ফেনার জন্য ভুক্তভোগীরা দেখতে পায় না। পরবর্তীতে অনুরূপ অন্য একটি প্লাস্টার মোমের দলার মধ্যে ভুক্তভোগীদের স্বর্ণালংকার গুলো ঢুকিয়ে পরিষ্কারের কথা বলে এই দলাটিও একই বালতিতে রেখে দেয়।
কিছুক্ষণ পরে বালতিতে পূর্ব হতে রাখা ফাঁকা দলাটি তুলে একটি বাটিতে রেখে ঢাকনা লাগিয়ে ভুক্তভোগীদের ফ্রিজে রাখতে বলে। সাথে এ কথাও বলে দেয় যে, আধা ঘন্টার পূর্বে এই বাটি খোলা যাবে না, কেননা এর ভিতরে এসিড পানি আছে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা এসিড মিশ্রিত বালতির পানি বাইরে ফেলে দেওয়ার নাম করে স্বর্ণসহ প্লাস্টারের দলা নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। এছাড়াও গ্রেফতারকৃতরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যেন তাদেরকে চিনতে না পারে সেজন্য তারা বোরকা এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার করতো বলে জানা যায়। একই কৌশলে গতকাল নরসিংদীর বাসাইল এলাকার একটি বাড়িতে স্বর্ণালংকার চুরি করে পালানোর সময় চুরিকৃত স্বর্ণালংকারসহ তারা র‌্যাব-১১ কর্তৃক হাতেনাতে গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত আলী হোসেন একজন স্বর্ণকার এবং গ্রেফতারকৃত সালমা তার অন্যতম সহযোগী। গ্রেফতারকৃত আলী হোসেন এর পূর্বে আশুলিয়ায় একটি স্বর্ণের দোকান ছিল। তিনি বিগত ৩-৪ বছর যাবত বিভিন্ন জায়গায় এই প্রতারণার কাজ করে আসছে বলে জানা যায়।
এ সকল প্রতারক চক্র দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটিয়া সেজে মহিলাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে অভিনব কায়দায় প্রতারণার মাধ্যমে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিতো। এসকল প্রতারক চক্র হতে আপনারা সর্তক থাকবেন এবং প্রতারিত হবেন না। যারা বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন তারা অবশ্যই ভাড়াটিয়াদের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচা-বাচাই পূর্বক বাড়ি ভাড়া দিবেন, অন্যথায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।৷
(নিজস্ব প্রতিবেদক/এইদিনএইসময়)

সর্বশেষ নিউজ