কয়েক দিন বাদেই কোরবানি ঈদ। স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ইতোমধ্যে রাজধানী ছাড়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন নগরবাসী। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো থেকে। তাছাড়া সড়ক ও মহাসড়কগুলোর বেশ উন্নয়নও সাধিত হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। কিন্তু বরাবরের মতো সব উদ্যোগই ভেস্তে যেতে বসেছে ঈদ ঘিরে মহাসড়ক দখল করে গড়ে ওঠা শতাধিক পশুর হাটের কারণে। ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানজটের পাশাপাশি উঁকি দিচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো মিলিয়ে অন্তত এক কোটি ২০ লাখ মানুষ বাড়ির পথে রওনা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বড় একটা অংশ যাত্রা করবে সড়কপথে। সারা দেশে চলবে অন্তত ৫০ হাজার বাস-মিনিবাস। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদ মৌসুমে সড়কের অবকাঠামোগত অবস্থা ভালো থাকায় ঈদযাত্রা অনেকটা আনন্দঘন হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। তবে, যাত্রা শুরুর আগেই সেই আনন্দ ম্লান হওয়ার উপক্রম পথে পথে কোরবানির পশু আর ক্রেতা-বিক্রেতার জটলায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে যানজটপ্রবণ ১৫৫টি জায়গা চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এসব জায়গা সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিও প্রস্তুত করেছে সংস্থাটি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসব কিছুই কাজে আসবে না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এখন সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ভালো। সড়কের কারণে তেমন ভোগান্তি হবে না। তবু যানজটের আশঙ্কা করছি। অব্যবস্থাপনার কারণেই যানজট সৃষ্টি হবে। এখন থেকেই এটা লক্ষ করা যাচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো প্রধান জাতীয় মহাসড়কের পাশে ৭০-৮০টি পশুর হাট বসেছে। উত্তরাঞ্চলের পথেও একই অবস্থা। তবে মহাসড়কগুলোকে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার মধ্যে আনার এখনো সুযোগ আছে।’
বিআরটিএর হিসাব বলছে, কোরবানির ঈদে মহাসড়কের পাশে বসে প্রায় ২১৭টি পশুর হাট। মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি হাট বসে কুমিল্লা এলাকায়। এতে গাড়ি চলাচলের গতি অনেক কমে যায়। সৃষ্টি হয় যানজট। এছাড়া দুর্ঘটনার আশঙ্কাও তৈরি হয় এতে।
এছাড়া রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার মুখগুলোতে দীর্ঘ যানজটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে দূরপাল্লার গাড়িগুলোর। বিশেষ করে গাবতলী আমিনবাজার এলাকায় গরুর হাট রয়েছে। এছাড়া পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ার পর নবীনগর ও চন্দ্রা এলাকায়ও দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। আবার পদ্মা সেতু দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোকে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের মুখে এবং সায়েদাবাদ এলাকায় যানজটের মুখে পড়তে হতে পারে।
ঈদকে কেন্দ্র করে একদিকে যাত্রী নিয়ে গাড়ি বের হবে, অন্য দিকে পশু নিয়ে ট্রাক ঢুকবে; ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাস্তা আগের চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকবে। ফলে যানজটের মাত্রাও স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়কের পাশের হাট যেন মূল সড়কে চলে না আসে, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বাসে এবার আগের মতো চাপ হবে না। দূরপাল্লায় অনেক মানুষ মোটরসাইকেলও যাচ্ছে। সড়কের অবস্থা ভালো। তবে পশুবাহী গাড়ির কারণে গতি কমতে পারে। সড়কের পাশের হাট যেন মূল সড়কে চলে না আসে, সেদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টি রাখার অনুরোধ থাকবে।’
(এইদিনএইসময়/বিজয়)