১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার

ভালো নেই সাতক্ষীরার দ্বীপ ইউনিয়নের মানুষ  

মিহিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা
spot_img
spot_img

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা সুন্দরবন সংলগ্ন ৩৩বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। স্থানীয় অর্থনীতিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করা কাঁকড়া, বাগদা চিংড়ির প্রধান উৎপাদনস্থল গাবুরা এলাকা। তেমনি এখানকার বেশির ভাগ মানুষের জীবন জীবিকা সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল।

গাবুরা ইউনিয়নে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি দাখিল ও ২টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে।

এর মধ্যে ১৫টিতে রয়েছে সাইক্লোন শেল্টার। এছাড়া গাবুরার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য রয়েছে ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক। রয়েছে ৪টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও।

লবণ পানির মধ্যে বসবাসরত হাজার হাজার জনগোষ্ঠির খাবার পানির চাহিদা পূরণে ৯ নম্বর সোরা এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘দৃষ্টিনন্দন’ মিষ্টি পানির পুকুর। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় চাঁদনীমুখা ও জেলেখালী এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর চরে গড়ে তোলা হয়েছে কৃত্রিম বনভূমি।

এতসব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার মানুষ ভালো নেই। নানা সমস্যায় জর্জরিত চারপাশে নদী বেষ্টিত গাবুরার ২৭ কিলোমিটার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ। বার বার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ায় মানুষের জীবন যাত্রা বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি ম্লান হয়ে যায় সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকান্ড। সব সময় প্লাবন আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করে এখানকার মানুষ।

উপজেলার সবচেয়ে জন বহুল ইউনিয়ন হওয়া সত্ত্বেও গাবুরার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কয়েকশ মিটার আরসিসি রাস্তা ও মুষ্টিময় ইটের সোলিংয়ের রাস্তা থাকলেও গাবুরার প্রায় পঁচানব্বই ভাগ সড়কই এখনো কাঁচা। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ দিয়ে চলতে গেলে গা শিউরে ওঠে। যার বেশির ভাগই ভেঙে নদীতে চলে গেছে।

সাগর কূলে বসবাসরত এ জনপদের মানুষকে প্রতিনিয়ত লবণ পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হচ্ছে। উপর্যুপরি বেড়িবাঁধ ভাঙনের কারণে এক সময়ের সবুজ শ্যামল জনপদ গাবুরা গাছ-গাছালী শূন্য হয়ে পড়ছে। কৃষি উৎপাদন নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়। ফলে এলাকায় কর্মসংস্থানের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বৃক্ষরাজী শূন্য হয়ে পড়ায় এ অঞ্চলের মানুষকে প্রতিনিয়ত মারাত্মক জ্বালানি সংকটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

সুপেয় খাওয়ার পানির সংকটে এখানকার মানুষের জীবন বিপর্যস্ত,পুকুরের পানি খেয়ে কোনো মতে বেঁচে থাকা গাবুরার মানুষকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে পায়ে হেঁটে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। সেই সঙ্গে ব্যবহার্য পানিও লবণাক্ত হওয়ায় ছড়াচ্ছে চর্ম রোগ।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের নেই কোনো স্থায়ী ভবন। স্থানীয় একটি স্কুলের দুটি রুমে কোনো মতে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। এতে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমও যেমন ঠিক ভাবে চলছে না, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম।

গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের বাবলু ও ডুমুরিয়ার সিদ্দিক গাজী বলেন, গাবুরায় খাওয়ার পানির খুবই সংকট। এখানে টিউবওয়েলে লবণ পানি ওঠে। পুকুরের পানি খেয়ে মানুষ বেঁচে আছে। তাও আবার নিয়ে আসতে হয় স্থান ভেদে চার থেকে সাত কিলোমিটার দূর হতে।

চাঁদনীমুখার ইউনুস আলী বলেন,আমাদের ইউনিয়নই মনে হয় দেশের এক মাত্র ইউনিয়ন যেখানে কোনো পিচের রাস্তা নেই। বেড়িবাঁধই আমাদের প্রধান রাস্তা। তাও জরাজীর্ণ। এছাড়া গ্রামের ভেতরের ইটের সোলিংয়ের রাস্তাগুলোয় ইট উঠে গেছে চলাচল করা যায় না।

গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জি,এম মাসুদুল আলম বলেন,এখানে সুপেয় খাবার পানির সংকট।বেড়িবাঁধ ও আর রাস্তা সবই জরাজীর্ণ।

তবে ইতো মধ্যে গাবুরা ইউনিয়নের মেঘা প্রকল্পের টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার মানুষের জন্য টেকসই বেড়ি বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

সর্বশেষ নিউজ