রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় আজ রোববারও (১২ মার্চ) থমথমে রয়েছে ক্যম্পাস ও আশেপাশের এলাকা। ক্যাম্পাসের সামনে ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ কম যানবাহন চলতে দেখা গেছে আজ। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাস ও বিনোদপুরসহ আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
গতকাল শনিবার থেকে তৈরি হওয়া এই পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। হামলার প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে এ ঘটনায় অন্তত ৯০ জন আহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর। এক শিক্ষার্থীর মাথায় গুলি লাগায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ, আহত দুই শতাধিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে‘সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ৮৭ জন ভর্তি রয়েছে। এদের অধিকাংশ রাবি শিক্ষার্থী। এর পাশপাশি পুলিশ ও অন্যান্য সাধারণ লোকও আছে। তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে।’
শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে রবি ও সোমবার সব ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, শনিবার বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার পথে বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে চালক ও তার সহকারীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীর। পরে বিনোদপুর বাজারে বাস থেকে নামার সময় তাদের মধ্যে আবারও কথা কাটাকাটি হয়। এসময় স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বাসচালকের পক্ষ নিয়ে কথা বললে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয় । খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ঘটনাস্থলে গেলে ব্যবসায়ীরা তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এরপরই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ , ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়
গতকাল বগুড়া থেকে বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে আসনে বসাকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে বাসচালক শরিফুল ও চালকের সহকারী রিপনের কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে রিপনের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর আবার বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তখন শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পাল্টা ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় কয়েকটি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে
দফায় দফায় এ সংঘর্ষে স্থানীয় লোকজনের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর এলাকায় দোকানে ও পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি সাত প্লাটুন বিজিবি কাজ করছে।