বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ছাত্র-জনতার রক্তে অর্জিত সাফল্য নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। বাংলাদেশ থেকে স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদ চিরতরে তাড়াতে হবে।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, দেশের মালিকানা জনগনকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা পূর্ণ গণতন্ত্র চাই। ভোটাধিকার চাই। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই। গুম,খুন ও বিনাবিচারে হত্যার অবসান চাই। আইনের শাসন চাই।মানবাধিকার চাই।একটি মানবিক বাংলাদেশ চাই।
তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে হবে। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির সাথে জড়িতদের বিচার করতে হবে।বিদ্যুৎ, কুইক রেন্টাল, মেগা প্রজেক্টের নামে দেশের অর্থ লুটেরাদের বিচার করতে হবে।ছাত্র ও গণহত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক সংবর্ধনা ও মত বিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব,বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব,বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে আগমন উপলক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীরা এ সংবর্ধনা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
সাবেক ছাত্রনেতা জাকির এইচ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন এডভোকেট আরিফুল হক চৌধুরী, নজির আহমদ ভান্ডারী, আবদুর রহিম বাহার, জাহাঙ্গীর আলম, হারুনুর রশীদ, আব্দুল মান্নান, মাসুদ রানা, আহসান উল্লাহ মামুন, মোজাম্মেল হোসেন সোহাগ, শাহ আলম, মামুনুর রশীদ মামুন, হারুনুর রশীদ হারুন, মশিউর রহমান রুবেল প্রমূখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাবেক ছাত্রনেতা নুর আলম ও আল মামুন সবুজ।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ভিন্নমতের লোকদের নির্যাতনের জন্য আওয়ামী লীগ আয়নাঘর বানিয়েছিল। যেখানে বিরোধী দলের নেতাদের চালানো হতো নিষ্ঠুর নির্যাতন।ক্রসফায়ারের নামে অসংখ্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়। বাসা থেকে ধরে নিয়ে ভিন্নমতের লোকদের ক্রসফায়ার ও তথাকথিত এনকাউন্টারের নামে গুলি করে হত্যা ছিল নিত্য দিনের ঘটনা।মানুষের বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার করতে দেয়া হতো না। তাঁকে অন্যায়ভাবে দেশে আসতে দেয়া হয় নি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এক কাপড়ে তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসাতো নিতে দেয় নি, উল্টো কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।এই ভয়াবহ দানব ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার দুই হাজার বিরীধীদলের নেতা-নেতা-কর্মীকে খুন করেছে। গুলিতে কারও হাত চলে গেছে, কারও পা চলে গেছে, কারও মাথার খুলি উড়ে গেছে। ১৭ বছর দেশে গণতন্ত্র বলতে কিছুই ছিল না।আজকে মুক্ত বাতাসে আমরা বাস করছি। কিন্তু মনে রাখবেন, সেই পর্যন্তই মুক্ত থাকবে, যত দিন আমরা দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত রাখতে পারব। আমরা যদি আওয়ামী লীগের মতো শুরু করি, ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে।তফ্যাসিবাদী শক্তি আবার ফিরে আসবে।তাই বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাছে অনুরোধ, ঐক্যবদ্ধ থাকুন।জনগনের পাশে দাঁড়ান। মনে রাখবেন বিএনপি জনগনের দল। দেশ ও জনগনের জন্য বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।তাই আমার অনুরোধ থাকবে জনগনের সেবক হিসেবে তাদের পাশে থাকুন। জনগনের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন।নিজেদের মানুষের কাছে প্রিয় বানান। কারও ওপর অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকুন।
উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে পেশাজীবীদের এ নেতা বলেন, ‘দেশে যে বিজয় অর্জন হয়েছে, সেই বিজয় কিন্তু নষ্ট হতে দেবেন না। যে সুযোগ আসছে দেশকে সমৃদ্ধ করার, সুন্দর করার, ভালো করার, সেটা যেন না হারাই।
সাংবাদিকদের এনেতা বলেন,গত ১৭ বছরে দেশের মানুষ অনেক খুব কষ্ট পেয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার আমাদের নির্যাতন করেছে। বিএনপি করার অপরাধে আপনাদের জেলে পুরে রাখা হয়েছে। আপনাদের এখানে অনেককে আমি দেখতে পারছি যারা সরকারের অত্যাচারের মুখে দেশান্তরি হয়ে এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই নির্দয়, নিষ্ঠুর অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। যেই হাসিনা সবচেয়ে প্রতাপশালী নেতা হয়েছিলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। সেই প্রতাপশালী শেখ হাসিনা আজ ভারতে আশ্রয় নিয়ে করুণ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। আর যাঁরা আপনাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করতেন, জমি-ব্যবসা নিয়ে নিতেন, তাঁরা জেলে চলে যাচ্ছেন। মনে রাখবেন নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-খুন করে ক্ষমতা চিরস্থ্যয়ী করা যায় না। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে জনগনের বন্ধ হতে হয়। বন্ধুকের নল নয়, জনগনই হচ্ছে ক্ষমতার উৎস।