আমার জীবনে দেখা বিশ্বসেরা ক্রিকেট লিজেন্ড শচীন টেন্ডুলকার। খেলা ছেড়ে দিয়েছেন সেই কবে। কিন্তু মানুষ তাকে সামনে পেলে কিভাবে যে ভালোবাসা শ্রদ্ধা প্রকাশ করে যা দেখলে অবাক হতে হয়। শচীন টেন্ডুলকার যেমন ছিলেন ক্রিকেট জিনিয়াস তেমনি যাদুকরী ব্যক্তিত্বেও তিনি আলোকিত। ভারতে বিজেপি কংগ্রেস এই রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের কাছে শচীনের সমান গ্রহনযোগ্যতা। কিন্তু শচীন তার ব্যাপক চাহিদা থাকা অবস্থায় ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। একজন প্রকৃত ক্রিকেটার দেশের জন্য খেলেন। দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য খেলেন না। শচীনকে আজো মানুষ যেভাবে কদর করে সেটা তার ব্যক্তিগত অর্জন। এমনকি আম্বানিরা তাঁকে যেভাবে সমাদর করে, দেখতে খুব ভালো লাগে। শচীনের ক্যারিয়ার নিয়ে তার স্ত্রী ডাক্তার অঞ্জলি কখনো মাথা ঘামান নি। নাক ঢুকাননি তার স্পোর্টস টাস্কে। কারণ অঞ্জলি ভিন্ন পেশার মানুষ। তিনি মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে গেছেন। আর শচীন তার নিজের বলয়ে ভর করে খেলতেন। কিন্তু আমাদের সাকিবের বউ শিশিরকে দেখতাম তিনি উল্টো তরঙ্গে হাঁটতেন। সাকিবের ক্যারিয়ারে হস্তক্ষেপ করেছেন শিশির। শচীনপত্নী অঞ্জলির চাইতে যোগ্য নন শিশির। কিন্তু তার অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ আর লোভ লালসা সাকিবের খেলার রিদম নষ্ট হয়েছে। উচ্চাভিলাষী শিশির সাকিবকে বাধ্য করেছেন টাকার পিছে দৌড়াতে। সাকিবের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবার পেছনে শিশিরের অসামান্য অবদানের কথা কেউ কি ভুলবে কখনো?
আমার মন ভারাক্রান্ত হয় আমাদের সাকিব আল হাসানের কথা ভাবলে। টাকার প্রতি কার না চাহিদা আছে? কিন্তু টাকাই যখন খেলার চেয়ে বেশি প্রায়োরিটি পায় তখন মন খারাপ লাগে। সাকিব আল হাসান না থাকলে টাকা আমাদের ক্রিকেট বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো না। একথা সাকিবের শত্রুপক্ষও স্বীকার করবে। আজ সাকিব আল হাসানের জন্য আমার খারাপই লাগছে। এভাবে বিমর্ষ মুখে তাকে কখনো কথা বলতে ও জোর করে হাসতে দেখিনি। আমার ক্রিকেটে সাকিবের অসামান্য অবদানের কথা অস্বীকার করার কিছু নেই। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে গৌরবের সঙ্গে রিপ্রেজেন্ট করেছেন একমাত্র সাকিব। দারুন ফর্মে থেকেও তাকে তাকে লোভ গ্রাস করেছিল। কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে আসীন যিনি সেই সাকিব নিজেই তার নামকে মানুষের হৃদয়ে ফিকে করে ফেলেছেন। মজবুত অবস্থানকে নড়বড়ে করে দিয়েছেন। সাকিবের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ার পেছনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাও কম ছিলনা। ক্রিকেটার খেলবে ক্রিকেট। সে কেন রাজনীতি করতে আসবে?সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাকিবকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দিয়ে তার ব্রেন থেকে ক্রিকেটের প্রতি ডেডিকেশন নষ্ট করে দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে সাকিব হয়ে উঠেছিলেন অ্যারোগেন্ট, ইগোস্টিক, সেলফিশ, গ্রিডি। অনেক সময় সাকিবের নেগেটিভ সাইড নিয়ে আমরা সমালোচনা করেছি। কিন্তু আজ যখন পূর্বাভাস পাচ্ছি তিনি ক্রিকেট থেকে সরে যাবেন তখন তার জন্য হৃদয় সত্যি ব্যথিত হয়। সাকিবের পৃষ্টপোষকরা আজ ক্ষমতায় নেই। কিন্তু সাকিব রয়ে গেছেন তার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে। সাকিব যদি আগে বুঝতেন বিপদে কেউ পাশে থাকেনা, তাহলে এমপি হবার খায়েশ তার মাথায় কিলবিল করতোনা। আওয়ামী লীগ বিএনপি জামাত শিবির–সবদলের সমর্থকরা একসময় সাকিবকে ভালোবাসতো। কিন্তু পচা শামুকে পা কেটে সাকিব তার সেই প্রাপ্তি হারিয়েছেন। ক্রিকেটারদের কখনোই রাজনীতিতে জড়ানো উচিত নয়।