১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ: এএসপির সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর বাড়ি দখল

এইদিনএইসময় ডেস্ক
spot_img
spot_img

রাজধানীর উত্তরাতে পুলিশের এক এএসপির সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শেখ নুরুর রহমানের বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মো. সোহেল রেজা ওরফে ইদন নামের এক সন্ত্রাসী ২০২২ সালে দলবলনিয়ে জোর করে ওই প্রবাসীর বাড়িটি দখল নিয়ে প্রতি মাসে ৮৫ হাজার টাকা ভাড়া তুলে নিচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় থানায় একাধিকবার অভিযোগ করে কোনো সুরাহা পাননি নুরুর রহমান। সোহেল রেজা আওয়ামীলীগের নেতা হওয়ায় ফ্যাসিস্ট সরকারের পুরো প্রশাসন ছিল তার পক্ষে। ফলে আদালতে মামলা করে নিজের পক্ষে রায় পেলেও বাড়ির দখল পেতে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা পাননি ভুক্তভোগী। নুরুর রহমানের অভিযোগ, সোহেল রেজা তার বোন জামাই এ.এস.পি বাহাউদ্দিন ভ‚ইয়ার সেল্টারে বাড়িটি দখল নিয়েছেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে বছরের পর বছর অবৈধ ভাবে ভাড়া তুলে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় শেখ নুরুর রহমানের স্বজনদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

রোববার দপুরে রাজধানীর শেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শেখ নুরুর রহমান। নুরুর রহমানের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করেন অ্যাডভোকেট তানজিল আহমেদ সানি। এসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন শেখ নুরুর রহমান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আমি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি। গত দুই বছর ধরে দক্ষিনখান থানাধীন আশকোনা হজ্জক্যাম্প রোড সংলগ্ন আমার বাড়িটি দখল করে নিয়েছে সন্ত্রাসী সোহেল রেজা। বাড়িটির আমার বোনের অংশ সন্ত্রাসী সোহেলের কাছে বিক্রি করে। কিন্তু সোহেল আমার ভাই সবুজকে জোর করে সাদা কাগাজে স্বাক্ষর নিয়ে পুরো বাড়িই দখল নিয়েছে। সোহেলকে প্রত্যক্ষ ভাবে সহায়তা করেছে তার দুলাভাই এ.এস.পি বাহাউদ্দিন ভ‚ইয়া। ফলে বিচার চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ নুরুর রহমান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি নিরুপায় হয়ে আমার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ফিরে পেতে আপনাদের সহায়তা চাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তানজিল আহমেদ সানি বলেন, রাজধানীর দক্ষিনখান থানাধীন সাং- ৪০৪ (নতুন), ২৬ (পুরাতন) আশকোনা হজ্জক্যাম্প রোড সংলগ্ন একটি বাড়ির মালিক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শেখ নুরুর রহমান। বাড়িটি সে ও তার বোন দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখল করে আসছিল কয়েক বছর আগে তার বোনের অংশের সম্পত্তি মো. সোহেল রেজা (ইদন) নামে একজনের কাছে বিক্রয় করেন। সোহেল রেজা নুরুর রহমানের বোনের অংশের সম্পত্তি কিনে সুকৌশলে পুরো সম্পত্তি দখল করেন। পরে নুরুর রহমানের বাড়ির অংশের ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে প্রতি মাসের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে ভাড়া তুলে আত্মসাৎ করছে সোহেল।
তিনি আরও বলেন, নুরুর রহমান দেশের বাইরে থাকায় তার মালিকানাধীন বাড়িতে বর্তমানে তার ছোট ভাই এহছানুর রহমান সবুজ থাকেন। সোহেল রেজা নানা সময় নানাভাবে এহছানুর রহমান সবুজকেও হুমকি দিয়ে আসছে। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর সোহেল রেজা তার লোকজন নিয়ে বাড়ীর নীচ তলায় থাকা জমজম হোটেলের মালিককে মারধর করে এবং তাদের ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাট থেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বের করে দেয়। এ বিষয়ে এহছানুর রহমান সবুজ প্রতিবাদ করলে সোহেল রেজা তাকে ভয়ভীতি ও প্রান নাশের হুমকি দেয়। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর দক্ষিন থানার জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা হয় যার নম্বর- ১১৬৬। এতে সোহেল রেজা ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি এহছানুর রহমান সবুজকে অপহরন করে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩০০ টাকার ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে এবং একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। এঘটনার পর ২০২৩ সালের ১৯ মে থানায় জিডি করা হয় যার নম্বর ৯০৫। এই সোহেল রেজার হাত আইনের থেকে এতই লম্বা হয়ে গেছে যে, এতবার আইনের আশ্রয় নিয়েও কোন সুরাহা করা যায়নি।

অ্যাডভোকেট তানজিল আহমেদ সানি আরও বলেন, ২০২২ সাল থেকে বহুবার আইনের আশ্রয় নিয়েও কোন সুফল পাই নাই। তার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে সোহেল রেজা এর বোনের জামাই এ.এস.পি বাহাউদ্দিন ভ‚ইয়া। তিনি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। যখনই আইনের সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে তখনই সে পুলিশের প্রভাব খাটিয়ে আইনের সাহায্য নিতে দেয় নাই বরং বারবার সোহেল রেজাকে কোন না কোন ভাবে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এই সোহেল রেজা বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের প্রভাব খাটিয়েছে। থানা পুলিশের কাছে কোন সহায়তা না পেয়ে পরর্তীতে ঢাকার সি.এম.এম আদালতের স্মরনাপন্ন হন ভুক্তভোগী নুরুর রহমান। তিনি একটি মামলা দায়ের করে যার নম্বর- ৪৭১/২৩। বর্তমানে ওই মামলায় সোহেল ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামী।
তিনি আরও বলেন, এই সোহেল ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসর হিসাবে কাজ করেছে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অনেক ছাত্র আহত এবং নিহত এর দায়ে হত্যা মামলার আসামী হয়েছে এই সোহেল। এত কিছুর পরেও সোহেল তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থামায় নি, প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ নিউজ