১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার

রিমান্ড শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীদের বিতন্ডা, বিব্রত বিচারক

এইদিন এইসময় ডেস্ক
spot_img
spot_img

 

চট্টগ্রাম নগরে একটি পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে সংগীত-বিতর্কের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দু’জনের রিমান্ড শুনানিতে বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসময় বিব্রত হয়ে এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।

আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আদালত সূত্র জানায়, পূজামণ্ডপে সংগীত পরিবেশনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাতের
অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের করা রিমান্ড আবেদনের শুনানি ছিল আজ। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলিউল্লাহ।

একই সঙ্গে আসামিদের জামিন শুনানির জন্য কাল মঙ্গলবার দিন ধার্য রাখা হয়। এর আগে শুনানিতে বাদী ও আসামিপক্ষের  আইনজীবীরা বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান।

গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরের পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। দুই আসামি হলেন— চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম ও নুরুল ইসলাম। দুজনই মাদ্রাসার শিক্ষক।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এ এম হুমায়ুন কবির বলেন,পুলিশের   করা রিমান্ড আবেদন বাতিলের জন্য আসামি পক্ষের আইনজীবীরা  আবেদন করেন। একই সঙ্গে জামিনের আবেদনও করা হয়।

অপর দিকে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নিয়ে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করেন। ওই সময় দুই পক্ষ তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে, একপর্যায়ে বিচারক রিমান্ড আবেদন বাতিলের আদেশ দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যান।

আদালত সূত্র আরো জানায়, আসামিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী শামসুল আলম। তিনি আদালতকে বলেন, আসামিরা পূজা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। মঞ্চে ওঠার আগে তাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়।

অপর দিকে বাদীপক্ষের সুজন দাসসহ কয়েকজন আইনজীবী অংশ নেন। তাঁরা আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, আসামিরা যে গান করেছেন, তাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন।

গত শুক্রবার নগরের কোতোয়ালি থানায় মহানগর পূজা কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে কমিটির যুগ্ম সম্পাদক (বহিষ্কার) সজল দত্ত, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, নুরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ ইকবাল, মো. রনি, গোলাম মোস্তফা, মো. মামুনসহ আরও সাতজনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে মহানগর পূজা উদ্‌যাপন কমিটি স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর মাধ্যমে সন্ধ্যার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন পূজামণ্ডপে আসতে শুরু করেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন।

ইতিপূর্বে পূজা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত (ঘটনার পর বহিষ্কৃত) চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার কথা বলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন (গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়) চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পী অনুষ্ঠানে আসেন এবং দুটি গান পরিবেশন করেন।

এর মধ্যে একটি গানের ভাষার শব্দচয়নে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার মতো মনে হওয়ায় পূজা উদ্‌যাপন কমিটি তাৎক্ষণিক গান বন্ধ করতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা চিন্তা করে বন্ধ করেনি।

ইতিমধ্যে পরিবেশন করা একটি গান (গজল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয় সদস্য দুর্গাপূজার মঞ্চে দুটি গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে একটি গান ছিল ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

(এএ/ফারহানা সুমনা)

সর্বশেষ নিউজ