হ্যালো জুনিয়র,
হোয়াটসআপ! সিনিয়রের পক্ষ থেকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা নিয়ো। আশা করি, তোমাদের আয়রোজগার ভালোই হচ্ছে। এত দিন ধরে আমাদের তিল তিল করে গড়ে তোলা চাঁদাবাজিশিল্পের সুফল তোমরাও ভোগ করছ দেখে বুকটা ভরে যাচ্ছে। সারা দেশে চাঁদাবাজি আর সিন্ডিকেটের জাল বিছিয়ে আমরা যে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম আমরা না থাকলে কেই–বা হাল ধরবে। কিন্তু না। তোমরা আশাহত করোনি। ‘বিকল্প’ হয়ে ঠিকই দাঁড়িয়ে গেছ।
তোমাদের কীর্তি দেখে প্রায়ই আমার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো বলতে ইচ্ছে করে—
‘নবীন কিশোর,
তোমায় দিলাম মহাখালীর ধোঁয়াচ্ছন্ন বাস টার্মিনাল
তোমাকে দিলাম কারওয়ান বাজারের আধিপত্য
আর পকেটভরা হাসি।’
যাহোক, আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে তোমার মতো নতুন দিনের সৈনিকদের কিছু পরামর্শ দিচ্ছি। টুকে নিতে পারো।
দীর্ঘদিন এই শিল্পে তোমাদের পদচারণ না থাকায় চাঁদা তুলতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। মনে রাখবে, চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে চাপার জোরই সব। যে যত জোরে গালি দিতে পারবে, সে তত দ্রুত চাঁদা হাতে পাবে। গালি প্র্যাকটিসের জন্য মাঝেমধ্যে ‘ইতিহাস’ সৃষ্টি করা নায়কের সিনেমা দেখার অনুরোধ রইল।
ক্যাশলেস বাংলাদেশের ভিশন সামনে রেখে চাঁদাবাজি করতে হবে। নগদ টাকার উত্তোলনের পাশাপাশি নিজের নামে একটা কিউআর কোড তৈরি করে নিতে পারো, যেন মানুষ সহজেই তোমার কোডটি স্ক্যান করে চাঁদা দিতে পারে। এ ছাড়া দ্রুত চাঁদা প্রদানে মানুষকে উৎসাহিত করতে ক্যাশব্যাক অফার চালু করতে পারো। চাইলে ‘বর্ষসেরা চাঁদা প্রদানকারী’ পুরস্কারও প্রবর্তন করা যেতে পারে।
চাঁদাবাজি করার সময় অনেকেই মায়াকান্না জুড়ে দিয়ে নিজেকে গরিব দাবি করতে পারে, চাঁদাদানে অক্ষম প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে শুধু একটা কথাই মনে রাখবে—চাঁদা তোমার মৌলিক অধিকার। এই পৃথিবীতে তুমি ছাড়া বাকি সবাই ধনী। কোনো রকম ইমোশনাল অ্যাটাকের শিকার হওয়া চলবে না। সুযোগ পেলেই শার্টের কলার চেপে ধরবে। শার্টের কলার মূলত একটা তারবিহীন সুইচ। ওখানে চেপে ধরলে এটিএম মেশিনের মতো পকেটের টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হয়ে আসে।
চাঁদাবাজিতেও সর্বদা নিজের প্রোফেশনালিজম বজায় রাখবে। কোনো অবস্থাতেই নিজের ক্যারেক্টার থেকে বের হওয়া যাবে না। চাঁদাবাজি করার সময় গার্লফ্রেন্ডের সামনে পড়লেও ক্যারেক্টার পরিবর্তন করা যাবে না। বরং সুযোগ পেলে তার কাছ থেকেও কিছু চাঁদা আদায় করে নিতে হবে। মনে রাখবে, একবার প্রোফেশনালিজম থেকে বিচ্যুত হয়ে ক্যারেক্টার থেকে বের হয়ে ভালো মানুষ সাজলে পরদিন আর মানুষ তোমাকে মূল্য দেবে না, চাঁদা তো দূরের কথা।
আমাদের ছেলেরা হেলমেট পরে চাঁদাবাজি করত। এতে সহজেই লোকজন দূর থেকেও তাদের চিনতে পারত এবং চাঁদার টাকা প্রস্তুত রাখত। আশা করি, তোমরাও নিজেদের ব্র্যান্ডিংয়ে মনোযোগ দেবে। আমাদের মতো তোমরাও এ রকম কোনো বেশ ধরবে, যেন দূর থেকেও মানুষ তোমাদের চিনতে পারে।
মাঝেমধ্যে চাঁদা তুলতে গেলে লোকজন তোমাকে ‘১৫ বছর কোথায় ছিলে?’ বলে তাচ্ছিল্য করতে পারে। এসবে ঘাবড়ে গেলে চলবে না। মনে রেখো, এখন যেমন আমি দৌড়ের ওপর আছি, তেমনি একদিন তোমাকেও দৌড়ের ওপর থাকতে হবে। এ জন্যই আমার এক বড় ভাই পইপই করে বলেছিলেন, ‘লাইফ ইজ আ রেস।’ মানুষমাত্রই দৌড়বিদ।
পরিশেষে বলতে চাই, প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করে না। তাই এখন আমাদের জায়গায় তোমরা পুরোদমে কাজ করছ। পকেট পূর্ণ করার এখনই সময়। পকেটের ‘পূর্ণতা’ নিয়েই তো আর্টসেল গেয়েছে, ‘আর নয় সময় উদ্দেশ্যহীন মিছিলে/ তুমি সেই পূর্ণতা আমার অনুভবে।’
সরকার যাবে, সরকার আসবে, কিন্তু মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া যাবে না—এই প্রতিপাদ্যকে বুকে লালন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই প্রজন্মের চাঁদাবাজদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। কোনো সাহায্য লাগলে সংকোচ কোরো না। আমাকে জানাতে পারো। বেশ কয়েক দিন গর্তে থাকলেও এখন উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করেছি। আশা করছি, সামনের দিনগুলোয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা চাঁদাবাজিশিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে পারব।