১২ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার

বড় হতে পারে উপদেষ্টা পরিষদের আকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img
spot_img

বড় হতে পারে উপদেষ্টা পরিষদের আকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এমন আরও কয়েকজন নতুন মুখ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করার ব্যাপারে জোর আলোচনা চলছে।

এছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিতরণেও আসতে পারে রদবদল। এ ব্যাপারে সব রকমের প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা আছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।

সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদে কিছু নতুন মুখ যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে সচিবালয় সূত্রে। মূলত, প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আনতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি সূত্রগুলোর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা দুই বা ততোধিক মন্ত্রণালয় পরিচালনা করছেন। এর ফলে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে।

যেসব উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কাজের চাপ কমাতে নতুন উপদেষ্টা যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে, এক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কত দিনের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রসারণ হবে, তার সঠিক তারিখ জানা যায়নি। তবে চলতি মাসের মধ্যেই নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

নতুন উপদেষ্টাদের সংখ্যা কত হবে, সে বিষয়েও নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি তিনি। তবে, জোর আলোচনায় রয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিববহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অথবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সচিব, দপ্তর প্রধান ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে।

ফলে কাজের গতি অনেকটা কম লক্ষ করা যাচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের পর প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে প্রশাসনিক কাজ ও নজরদারিতে গতি আসবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

কিছুদিন আগেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনে স্থবিরতা নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ১৬-১৭ বছরের বিষয়ের সমস্যা অল্প সময়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। একটু সময় লাগবে।

এছাড়া গত মাসের ১২ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনে স্থবিরতার কথা স্বীকার করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও। তিনি বলেন, প্রশাসনে স্থবিরতা আছে; এটা আমরা লক্ষ করছি। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থবিরতা কেটে যাবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

শুরুতে প্রধান উপদেষ্টাসহ এই সরকারের সদস্যসংখ্যা ছিল ১৭। এরপর এক সপ্তাহের ব্যবধানে গত ১৬ আগস্ট আরও চারজন উপদেষ্টাকে যুক্ত করা হয় সরকারে।

বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা তিনটি করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। দুটি করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন ১০ জন উপদেষ্টা। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে আছে ৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

এই মুহূর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা।

অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন ড. আসিফ নজরুল।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের ওপর।

দুটি করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন যে উপদেষ্টারা তাদের মধ্যে লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সামলাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়।

হাসান আরিফ সামলাচ্ছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়। আদিলুর রহমান খান সামলাচ্ছেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যুক্ত আছেন আলী ইমাম মজুমদার। এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আছেন আসিফ মাহমুদ।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ফারুক-ই-আজম, বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে শারমিন এস মুরশিদ দায়িত্ব পালন করছেন।

দুটি করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পিত আছে যে উপদেষ্টাদের ওপর, তাদের মধ্যে মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, নূর জাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের, বিধান রঞ্জন রায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে, আ ফ ম খালিদ হাসান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এবং সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।

সব মিলিয়ে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে ৫৮টি। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বে সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ৪৫ জন।

একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ছিলেন ৪৭ জন। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে উপদেষ্টার সংখ্যা ছিল ১৬।

মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো দ্রুত সচল ও গতিশীল করতে গত ১২ আগস্ট নিজের হাতে থাকা ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত ২৮ জন সচিবকে নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এরপরও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরে ১৬ আগস্ট আরও চারজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হলেও দৃশ্যমান থেকে যায় ধীরগতি।

পরবর্তীতে ৪ সেপ্টেম্বর সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করে কাজের গতি বাড়াতে আবারও নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপরও উপদেষ্টাদের উদ্যোগ ছাড়া সহজে কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

(এএ/ফারহানা সুমনা)

সর্বশেষ নিউজ