২ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার

স্থবির হয়ে আছে দুদক: আলোচনায় কে হচ্ছেন চেয়ারম্যান কমিশনার

ফারহানা সুমনা
spot_img
spot_img

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা পদত্যাগ করেন। কিন্তু সরে দাঁড়াতে গড়িমসি করছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার। অবশেষে নানা সমালোচনার মুখে ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করেন তারা। তাদের পদত্যাগের প্রায় দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। কমিশনার শুন্য দুদকে চলছে স্থবিরতা।
কর্মকর্তারা রুটিন আসা যাওয়া করেন।

দুদক আইন অনুযায়ী, চেয়ারম্যান বা কমিশনার পদত্যাগের এক মাসের মধ্যে সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে শুন্য পদে কমিশনার নিয়োগ দেবে সরকার। তিন কমিশনার একযোগে পদত্যাগ করায় কমিটি ছয়জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে। এর মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি তিনজনকে নিয়োগের সুপারিশ করবেন। সরকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছে।

কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে, সরকার একদিকে দুদকের সংস্কারের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করে দিয়েছে। অন্যদিকে সার্চ কমিটি গঠন করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্চ কমিটি কীভাবে কমিশনার বাছাই করবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। সংস্কার কমিটির সুপারিশের আগে দুদক পুনর্গঠন হলে আগে যেভাবে রাজনৈতিক সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে তার মতো হয়ে যেতে পারে।

এদিকে, কে হচ্ছেন দুদকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ও কমিশনার তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। জানা গেছে, দুদকের সাবেক মহাপরিচালক, সাবেক একজন সেনা প্রধান, সাবেক একজন বিচারক ও আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি রয়েছেন আলোচনার শীর্ষে।

এদিকে কমিশন গঠন না হওয়ায় অনুসন্ধান, মামলা ও অভিযোগপত্রের অনুমোদন কিছু মিলছে না। মোটাদাগে এসব কাজ না হওয়ায় দুদকে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, কমিশনের এখতিয়ারে থাকা কাজগুলো হচ্ছে না। নতুন করে মামলার অনুমোদন, চার্জশিট অনুমোদন, ক্রোক সম্পত্তি অ্যাটাচমেন্ট, বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজকরা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, দুদক আইন ও বিধিতে তাদের (চেয়ারম্যান ও কমিশনার) যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ফাংশন করা সম্ভব না কমিশন গঠন ব্যাতিত।

তবে যেসব অনুসন্ধান ও তদন্তকাজ আগেই অনুমোদন হয়েছে, সেগুলো চলমান রয়েছে। কমিশন না থাকায় নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।

দুদকের একটি সূত্র বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত তিন মাসে দুই শতাধিক অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সদ্য বিদায় নেওয়া দুদক কমিশন।

এসব সিদ্ধান্তের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে অন্তত শতাধিক মামলা অনুমোদনের অপেক্ষায় আটকে আছে। ফাইলবন্দী হয়ে আছে অনেক চার্জশিটের সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি নতুন অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তও আটকে আছে।

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুদকের এখতিয়ার থাকা সত্ত্বেও কমিশন না থাকায় দোষী ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। আদালতের কাছে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অপরাধীদের দেশত্যাগ ও আত্মগোপনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি সূত্র বলেছে, সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

সার্চ কমিটির বিষয়ে দুদক আইন ২০০৪-এর ৭ ধারায় বলা আছে, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হবে।

এই আইনের ৬-এর ১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘কমিশনারগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ধারা ৭ অনুসারে গঠিত বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে নিয়োগপ্রাপ্ত হইবেন।’

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই কমিশনের পদত্যাগ করারই কথা ছিল। এখন দ্রুত সার্চ কমিটি করে কমিশন গঠন করা উচিত হবে।

কমিশন গঠনে দুদক সংস্কার কমিশনের কোনো ভূমিকা আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কমিশন গঠন সংস্কার কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত নয়। তবে সরকার চাইলে আমরা এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারি।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের এই প্রধান মনে করেন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে পারলে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকার যে সুযোগ পেয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করা উচিত

সর্বশেষ নিউজ