১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার

চাঁদপুর আধুনিক নৌ-বন্দর: ১৬ মাসে ১৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img
spot_img

শম্ভুক গতিতে চলছে চাঁদপুর আধুনিক নৌ-বন্দর নির্মাণ কাজ। দুই বছর মেয়াদী প্রকল্পের ১৬ মাস পার হলেও এখনো শেষ হয়নি পাইলিংয়ের কাজ! ধীরগতির কাজে দুর্ভোগ বাড়ছে এই বন্দর দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, নানা জটিলতায় নির্মাণ কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

চাঁদপুর শহরের মাদরাসা রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর পাড়ে চলছে চাঁদপুর আধুনিক নৌ-বন্দর নির্মাণ কাজের তোড়জোর। যেখানে ১ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার এলাকায় ৪ তলা বিশিষ্ট তিনটি ভবন নির্মাণসহ স্থাপন করার কথা রয়েছে পন্টুন, গ্যাংওয়ে, পার্কিং ইয়ার্ড, এক্সটার্নাল ব্রিজ ও বন্দরে যাতায়াতের রাস্তা প্রশস্থকরণের কাজ। ভবন নির্মাণের জন্য করতে হবে ৩১০টি পাইলিং। ইতোমধ্যে ১৫০টি পাইলিংয়ের আংশিক ও ৮৬টি পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হলেও ইতোমধ্যে কেটে গেছে ১৬ মাস। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ ২৪ মাস। ২০২৩ সালের আগস্টে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর মে মাসে। অথচ এখনো বাকি পড়ে আছে প্রকল্পের ৮০ ভাগেরও বেশি কাজ।

ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরটি আধুনিকায়নে ২০১৬ সালে একনেক সভায় অনুমোদন পায়। এরপর থেকে উন্নত সেবার আশায় বুক বাঁধে এই বন্দর ব্যবহারকারী চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, শরীয়তপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার হাজারো যাত্রী।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২ দশমিক ২ একর জমিতে নির্মিত আধুনিক নৌ-বন্দর প্রকল্পের ব্যয় প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ধরা হলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ কোটিতে। যার নির্মাণ কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন।

লঞ্চ যাত্রী আরশাদ আলী বলেন, আধুনিক নৌ টার্মিনালের কাজ শুরু হইছে প্রায় দেড় বছর আগে। এখনো দৃশ্যমান কোনো কিছুই করেনি। কবে এই কাজ শেষ হবে তার কোনো হিসেব নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালীপনায় এমন ধীরগতিতে চলছে নির্মাণ কাজ। এতে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

আরেক যাত্রী মো. ইয়াছিন বলেন, অস্থায়ী এই নৌ টার্মিনালে নেই কোনো বসার স্থান, টয়লেট কিংবা যাত্রী ছাউনি। পরিবার পরিজন নিয়ে যাতায়াতের সময় বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষ করে অসুস্থ ও নারীদের ভোগান্তি বেশি হয়। ভেবেছিলাম সহসায় নৌ-টার্মিনালের কাজ শেষ হবে এবং আমরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবো। কিন্তু সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হোক।

বিআইডব্লিউটিএ এর জেলা বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. বছির আলী খান বলেন, চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন ছোট বড় অর্ধশতাধিক লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করলেও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে তা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক গুণ। বন্দরের কাজ শেষ না হওয়ায় যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় সময়ই তারা আমাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করে। কিন্তু কাজের যেই গতি তাতে কবে নির্মাণ শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। আমরা চাই কাজ দ্রুত শেষ হোক, যেন যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারি।

এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে থাকলেও এখনো ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন লঞ্চঘাটের সাতজন ব্যবসায়ী। তাদের সকল কাগজপত্র জমা দেয়া হলেও টাকা পরিশোধ না করে নানা টালবাহানা করার অভিযোগ উঠেছে বিআইডব্লিউটিএ এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, লঞ্চঘাটের সকল ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের টাকার চেক বিতরণ সম্পন্ন হলেও অজানা কারণে আমাদের সাতজন ব্যবসায়ীর ক্ষতিপূরণের চেক দেয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা আমাদেরকে শুধু ঘুরাচ্ছেন। প্রায় ৩ বছর হলো আমাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। কাজকর্ম হারিয়ে এখন আমরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। আমরা আমাদের প্রাপ্য টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধের দাবি জানাই।

প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ এর অতিরিক্ত চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. আইয়ুব আলী বলেন, আমাদের এই কাজের জন্য মেয়াদ ছিল ২৪ মাস। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাস পাড় হলেও কাজ শেষ হয়েছে ১৬ শতাংশের মত। পাইলিংয়ের কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় মাটির নিচে ১০ মিটার পর্যন্ত বোল্ডার রয়েছে। এসব কারণে পাইলিংয়ের কাজ শেষ করতে সমস্যায় পড়তে হয়। পরবর্তীতে ওয়াল্ড ব্যাংক ও বিআইডব্লিউটিএ এর ট্যাকনিকেল টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিজেল হ্যামার দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ শুরু করি।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৮৬টি পাইলিংয়ের কাজ পুরোপুরি ও ১৫০টি পাইলিংয়ের আংশিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশাকরি নভেম্বর মাসের মধ্যে পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ভবনের কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করি। ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ না দেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

সর্বশেষ নিউজ