বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা এক মামলায় ৭৮ কৃষি কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৬ জন রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে (ডিএই) কর্মরত। আসামিদের মধ্যে ২৫ জন প্রকল্প পরিচালক, তিনজন নারী কর্মকর্তা ও তিনজন উপপ্রকল্প পরিচালকও আছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি করেন মো. মিস্টার হোসেন নামে এক ব্যক্তি। মামলার এজাহারে তাঁর বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। মামলায় মোট ২৬৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন– জাহাঙ্গীর কবির নানক, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাদেক খানসহ অনেক সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নামও আসামির তালিকায় রয়েছে। একই সঙ্গে আসামি করা হয়েছে ৭৮ কৃষি কর্মকর্তাকে। এক মামলায় একসঙ্গে এত কৃষি কর্মকর্তাকে আসামি করার ঘটনা এটিই প্রথম। কৃষিবিদরা বলছেন, ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই খামারবাড়িতে চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। বিএনপিপন্থি কিছু কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়কে চাপ দিয়ে শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলিও করিয়েছেন। খালি হওয়া পদে তারা পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়েছেন। প্রকল্প পরিচালক, উপপ্রকল্প পরিচালকসহ বেশ কিছু পদে এখনও আগের কর্মকর্তারা বহাল আছেন। এসব কর্মকর্তাকে সরাতে না পেরে তাদের খুনি আখ্যা দিয়ে ৫ নভেম্বর খামারবাড়ির দেয়ালে ছবিসহ ব্যানার টাঙানো হয়। পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কৃষিবিদদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে ব্যানার সরিয়ে নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। এর পরই চেয়ার দখলের জন্য কয়েক দিন ধরে কর্মকর্তাদের নামে মামলা করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
মামলার এজাহারে বেশ কিছু অসংগতি দেখা গেছে। বাদী তাঁর এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তিনি পড়ালেখা জানেন না। কিন্তু কর্মকর্তাদের অফিসিয়াল নাম নির্ভুলভাবে আইডি নম্বরসহ উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, খামারবাড়ির কিছু কর্মকর্তা পদ দখলের জন্য এসব নাম সরবরাহ করেছেন। ১৯ জুলাই শুক্রবার ঘটনা ঘটলেও মামলা করেছেন প্রায় চার মাস পর।
মামলার এজাহারে বাদী মিস্টার হোসেন উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে রাস্তার ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করে। এ সময় আমার ছেলে গাড়িচালক মো. ইনছান আলী (২৬) আহত হয়। আসামিদের নাম সংগ্রহ এবং সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে বাদী মিস্টার হোসেনের এজাহারে থাকা মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান বলেন, আমি তদন্ত করা ছাড়া মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একটি পক্ষ মঙ্গলবার রাতে থানায় এসে নানা চাপ সৃষ্টি করে। চাপে পড়ে মামলা নিয়েছি। তবে মামলাটির তদন্ত করা হবে। কোনো নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা হলে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হবে। কোনোভাবে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদপুর থানার এক কর্মকর্তা বলেন, একসঙ্গে সরকারি ছুটির দিনে ৭৬ কৃষি কর্মকর্তা দূরের একটি এলাকায় এসে গুলি চালাবেন– এটি বিশ্বাস করার মতো নয়। এর পেছনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তার ইন্ধন আছে।
কৃষিবিদরা বলছেন, পদ দখলের জন্য মামলায় জড়ানোর ঘটনা কৃষিতে এই প্রথম। এমন অনেক কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে, যারা অত্যন্ত মেধাবী; কখনও রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ্দীন মালিক বলেন, ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী জেনেশুনে ইচ্ছা করে কাউকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে মামলা করলে তা অপরাধ। এতে যারা প্রকৃত অপরাধী, তারা পার পেয়ে যাবে।