মোস্তফা সরয়ার ফারুকী একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং নাট্য নির্মাতা হিসেবে পরিচিত মুখ।
তিনি বেশকিছু ভিন্নধর্মী ও দর্শকপ্রিয় মেগা ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করেছেন। বেশির ভাগ সময় তিনি লেখক আনিসুল হকের সাথে বেশ কয়েকটি নাটকের কাজ করেছেন। এছাড়া তার বেশকিছু চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে তার অবস্থান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এসব আলোচনা সমালোচনা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তিনি তার অবস্থান তুলে ধরেছেন।এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বারবার নিজের অবস্থান মানুষের কাছে তুলে ধরার চেস্টা করে যাচ্ছেন।
শাপলা চত্বর’ বিষয়ক একটি ফটোকার্ড ও স্ক্রিনশট নেটিজেনদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ফারুকী ২০১৩ সালে বলেছেন, ‘শাপলা চত্বর জঞ্জালমুক্ত হয়েছে’।
আদৌ কি এমন স্ট্যাটাস দিয়েছেন উপদেষ্টা ফারুকী ? এমন প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে ফেসবুকে ঘুরতে থাকা এসব কার্ড ও স্ক্রিনশট নিয়ে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন,
নেটিজনদের প্রতি অনুরোধ করছি, কিছু বিশ্বাস করার আগে সবাই যেন সেটি যাচাই করে নেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে দেওয়া স্ট্যাটাসের শুরুতেই ফারুকী লিখেছেন, মানুষ ও ফিল্মমেকার হিসেবে আমি মধ্যপন্থার। তার ভাষ্যে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে একে অপরের পাশাপাশি থাকা এবং কোনো ধর্মীয় বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় কটাক্ষ ও হাঙ্গামায় না জড়ানোর জন্য একটা লেখা লিখে বহুবিধ ট্যাগও খেয়েছি। আমাদের আজিজ মার্কেটে দীপন খুনের পর লিখেছিলাম।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটকে ‘ফেইক’ উল্লেখ করে ফারুকী লিখেছেন, এগুলো মিথ্যা। শাপলা চত্বরের ঘটনার পরে আমি বরং লিখেছি, মাদ্রাসার সাধারণ ছাত্রদের মৃত্যুতে আমি ঘুমাতে পারছি না!
ইংরেজিতে লেখা পোস্টটা আগ্রহীরা দেখে আসতে পারেন।
মাদ্রাসার ছাত্রদের মৃত্যুতে খুশি কেন হব এই প্রশ্নটি রেখে ফারুকী বলেন,আপন দুই ভাই মাদ্রাসায় পড়েছে, আমি সাধারণ মাদরাসা ছাত্রদের মৃত্যুতে উল্লাস করব? মাদ্রাসার ছাত্র কেন, কোনো মানুষের মৃত্যুতে আমি উল্লাস করব? আমি তো এমনকি অপরাধীর মৃত্যুতেও শোক করি। মিথ্যা কথা ছড়ানোরও তো একটা মাত্রা থাকে।
ফারুকী তার স্ট্যাটাসে জানান, তারই প্রযোজনায় তার ছোট ভাই কিবরিয়া পরিচালনা করেছিলেন ‘আব্দুল্লাহ’ নামের চলচ্চিত্র, যেখানে দেখানো হয়েছে– কেবল মাদ্রাসায় পড়ার কারণে একটা ছেলেকে সমাজে কী রকম তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়।
সবশেষে ফারুকী লিখেছেন, আমরা আমাদের কাজটা এনজয় করছি। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুটা করতে পারব, যার ভেতর দিয়ে প্রাথমিকভাবে আট বিভাগীয় শহরে একটা নবতরঙ্গ শুরু করতে পারব।
পারব জুলাই ন্যারেটিভ নির্মাণ করতে, ১৫ বছরের দুঃশাসনের এক্সরে রিপোর্ট তৈরি করতে।
এর আগে, গত সোমবার (১১ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নানা বিষয়ে কথা বলেন।
সেদিন ফারুকী বলেন, উপদেষ্টার দায়িত্বটা তখনই নিতে রাজি হয়েছি, যখন মনে করেছি যে আমি কাজটা হয়তো করতে পারবো ।
ফ্যাসিস্ট বিরোধী অবস্থান এর পুরুষ্কার বা দায়িত্বের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমি ফ্যাসিস্টবিরোধী কিনা, তার পুরস্কার হিসেবে আমার কাজ প্রয়োজন নেই। আমি ফ্যাসিস্টদের বিরোধিতা করেছি আমার বিবেকের কারণে। নিশ্চয়ই এই পদের জন্য নয়।
প্রসঙ্গত, গত রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা (সংস্কৃতি) হিসেবে শপথ নেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।