বিগত আওয়ামী সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একটানা শাসনকালে প্রশাসনকে দলের অঙ্গ সংগঠনের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। প্রশাসনে এমন এক অরাজকতা তৈরি করা হয়, যেখানে লুটেরাদের ছিল রাজত্ব।
লুটেরাদের সহযোগী এমন প্রশাসনের অভ্যন্তরে কী ঘটতো তা প্রশাসনের কর্মকর্তারাই স্বীকার করেছেন। জনপ্রশাসন রাজনৈতিক দলের মতো সিদ্ধান্ত নিতো। তারা ছিল ব্যাপরোয়া। শনিবার রাজধানীতে এক সেমিনারে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রশাসনিক সংস্কার সংক্রান্ত ওই সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, এটা জনপ্রশাসন ছিল না। এরকম একটি সার্ভিস সাড়ে ১৫ বছর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের সঙ্গে মিলেমিশে দেশে লুটপাট চালায়।
আওয়ামী লীগ সরকার টানা চার মেয়াদে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করেছে। জনপ্রশাসনকে হাতে রাখতে দলীয়করণ, গাড়ি-বাড়ি কিনতে ঋণসুবিধা, ইচ্ছেমতো পদোন্নতি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জনপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নানা কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হয়েছিলেন। সংগঠনটিও কিছু কিছু বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর চুক্তিতে থাকা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার চুক্তি বাতিল করে সরকার। অন্যদিকে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এখন কারাগারে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও মোস্তফা কামাল, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আমিনুল ইসলাম খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়াসচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ।
অন্তর্বর্তী সরকার জনপ্রশাসন সংস্কারে গত ৪ অক্টোবর সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেছে। কমিশনের কাছে সুপারিশ দেওয়া সামনে রেখে সেমিনারটি আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এতে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবসহ প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা কথা বলেন। তাঁদের অধিকাংশই মূলত বিগত সরকারের আমলে পদ-পদোন্নতি ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তা।
সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসনসহ সিভিল সার্ভিসকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই প্রশ্ন তুলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, এটাকে কি কোনো সার্ভিস বলা যেত? সাড়ে ১৫ বছরে যা হয়েছিল, সেটি ছিল একটা দলীয়করণ করা, লুটেরাদের সহযোগী, দেশের সমাজ-অর্থনীতি দুর্বৃত্তায়নে সহযোগীদের একটি সার্ভিস। তিনি বলেন, এটা জনপ্রশাসন ছিল না। এ রকম একটি সার্ভিস সাড়ে ১৫ বছর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের সঙ্গে মিলে দেশকে লুণ্ঠন করে