সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী এক মাসের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই ধরনের অভিযোগে ওবায়দুল কাদেরসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী ৪৫ জনের ক্ষেত্রে পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতেও তদন্ত সংস্থাকে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সোমবার (১৮ নভেম্বর) এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এরপর তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তের জন্য দুই মাস সময় চান। তবে, ট্রাইব্যুনাল এক মাস সময় মঞ্জুর করে আগামী ১৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদনও সেদিন জানাতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় ও তদন্ত সংস্থার কাছে। এর মধ্যে একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের মধ্যে ৯ জন সাবেক মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে সোমবার (১৮ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার উদ্যোগ নেয় এ সরকার। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৭ অক্টোবর থেকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। সোমবার (১৮ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো শুনানি হলো ট্রাইব্যুনালে।
শুনানি শেষে সাংবাদিকদের ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, তদন্ত সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে করা পৃথক মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। শেখ হাসিনা এখন ভারতে আছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিবেদন দিয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারতের সঙ্গে থাকা চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার চেষ্টাও করছে সরকার।