আজকে যারা সংস্কারের কথা বলছেন তাদের অনেককে আন্দোলন সংগ্রামে দেখি নাই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপির বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের রূপরেখা নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে আমরা দেখছি, যারা বিখ্যাত লোক, বড় বড় টেলিভিশনে বক্তব্য দিচ্ছেন, বিগত বছরগুলোতে যখন বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ-এসবি-ডিবির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েছিল, যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে এক লক্ষ। সেখানে ৬০ লাখ আসামি করা হয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে ধান ক্ষেত দিয়ে পালিয়ে যেতে হতো তাদের কথা ভাবুন, এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বিপ্লবের মূল সত্য, এই সত্যকে অস্বীকার করতে পারবে না।
বিএনপিও সংস্কারের পক্ষে তবে সেটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হবে জানিয়ে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া; তবে সামগ্রিক সংস্কার শেষে নির্বাচন, এরপর ক্ষমতা হস্তান্তর হবে এটা যুক্তিসঙ্গত নয়। শুধুমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু রাষ্ট্রের সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু সংস্কার করে নির্বাচন দেয়া উচিত।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এই সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সংস্কারগুলো অত্যাবশকীয় দরকার সেই সংস্কারগুলো করে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। এটা আমার কথা নয়, একজন রিকশাচালক, দিনমজুর, গৃহশ্রমিক, নারী শ্রমিককে জিজ্ঞেস করুন। এই তরুণ সমাজকে জিজ্ঞেস করুন যারা বিপ্লব এনেছে তারা কি ভোটার হয়ে একবারও ভোট দিতে পেরেছে? পারে নাই। তাই ভোটের অধিকার ১২ কোটি ভোটারের মাঝে ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সত্যিকার জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে একটি সংসদ গঠন করবে। সেই সংসদ একটি সরকার গঠন করবে। ইনশাআল্লাহ জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয়, আমরা জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জনগণের কল্যাণে এই ৩১ দফা সংস্কার আমরা করব।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারই উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, মানবসভ্যতার ইতিহাস যদি পর্যালোচনা করেন তাহলে একটি বিষয় দেখবেন সেটি হলো মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্য সহস্র বছর ধরে মানুষ আন্দোলন করেছে, নিজের রক্ত ঢেলে দিয়েছে।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন কারও একার কৃতিত্ব নয়; এটা দেশের ছাত্র-জনতা সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় অর্জন হয়েছে। জুলাই আগস্ট আন্দোলন শুধু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল না। এ আন্দোলন ছিল গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন।
বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, তাই পাকিস্তানকে তাড়িয়েছে, বাকশালকে তাড়িয়েছে। তাই বিএনপির ৩১ দফা কে উপলব্ধি করতে চাইলে এই প্রেক্ষাপটকে উপলব্ধি করতে হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুলের সভাপতিত্বে কর্মশালা সঞ্চালনা করছেন বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব এবিএম মোশাররফ হোসেন। প্রশিক্ষণ কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে বিকালে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রমুখ।