যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক বিচারপতির স্কাইপ কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করেছিলেন আমার দেশের সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান।ওই রিপোর্ট হবার পর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার আমার দেশ বন্ধ করে দেয় এবং সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে দেশে ছাড়তে বাধ্য করেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তারা দেশে এসে আবার আমার দেশ চালু করেন। অনেকগুলো চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট করেন নোমান। কিন্তু কী অভিমানে তিনি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়ে আবার দেশ ত্যাগ করেন। এর নেপথ্যে কী ছিল। সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান তার ব্যাখ্যা দিলেন আজ।
তিনি বলেছেন,১৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকা ত্যাগ করার সময় নিজের অনুভূতি জানিয়ে একটা ষ্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। তখন ১৬ জানুয়ারি শুরু হয়ে গেছে। ছোট এই লেখাটি রীতিমতো ভাইরাল বলা চলে।
আমি হতাশার কথা জানিয়েছিলাম এই লেখায়। কেন হতাশ হয়েছি সেটাও বলেছিলাম সংক্ষিপ্ত আকারে। তবে সংক্ষিপ্ত হলেও সবকিছুই পরিস্কার ধারনা রয়েছে। আবারো বলছি—-
১/ হাজারো তরুণের জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে এই পরিবর্তনের জন্য।
২/ ২০ হাজারের বেশি তরুণ আহত। এখনো অনেকে চিকিৎসারত। অনেকে বাকী জীবন অন্ধত্বে কাটাতে হবে। অনেকেই পুঙ্গু হয়ে গেছেন।
এত রক্তের বিনিময়ে হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর তরুণরা।
কিন্তু এই তরুণরা হাল ধরার দায়িত্ব যাদের হাতে দিয়েছেন তারা অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুয়েপডা। দুই/একজন ছাড়া প্রায় সকলেই এই দায়িত্বটাকে নিয়েমিত চাকুরি হিসাবে নিয়েছেন। অভ্যূত্থানের স্পিরিট তাদের মধ্যে নাই বললেই চলে। এর মূল কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে, ফ্যাসিবাদের নিপীড়ন এদের অনেকের গায়ে লাগে নি। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে তাদের অনভিজ্ঞতা এবং অদক্ষতা আজকের এই পরিস্থিতি। ফ্যাসিবাদের রেখে যাওয়া প্রশাসনকে কিভাবে হ্যান্ডেল করা দরকার সেই ক্যাপাসিটি তাদের নাই।
প্রশাসনে যারা ভোটচুরিতে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেনে তারা আছেন বহাল তবিয়তে। ভারতে পালিয়ে যাওয়া হাসিনাসহ ফ্যাসিবাদের মন্ত্রিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন তারা। এই আমলারা প্রশাসনকে এক রকম জিম্মি করে ফেলেছে বলা চলে।
বদলী পোস্টিংয়ে টাকার ছড়াছড়ি। ঢাকা একটি সিটি কর্পোরেশনে প্রধান নির্বাহী হতে ৫০ কোটি টাকা তদবিরে দিতে হয়েছে শুনলাম। ডিসি হওয়ার জন্য সমপরিমাণ অফার দেওয়া হয়। এতেই অনুমান করা যায় কত টাকা এই নিচু স্থরের আমলারা কামাই করেছেন।কারণ, ডিসি মানে উপসচিব। উপসচিব ৫০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ডিসি হিসাবে পোস্টিং চায়। তাহলে ফ্যাসিবাদ আমলে কত কামিয়েছেন সেটা অনুমান করা যায় এই অফার থেকে।
ফাইল আটকিয়ে তারা ঘুষ নিবে না তো কি করবে!
এই প্রশাসনের কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে নি সরকার। ডিসি পোস্টিংয়ের পর ঘুষের অভিযোগ উঠলে তদন্ত কমিটি হয়েছিল। কেউ জানে না কি তদন্ত হয়েছে।
ফাইল আগের মতই ঘুষের জন্য টেবিলে টেবিলে আটকে থাকে।
মানুষের হয়রানি উপজেলা থেকে সচিবালয় পর্যন্ত কোথাও কমেনি। বরং বেড়েছে।
পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনে বদলি পোস্টিং তদবির করে মধ্যসত্বভোদি এক শ্রেনীর পাতি দালাল কোটি কোটি টাকা কামাই করছেন শহীদের রক্তের বিনিময়ে।
ছাত্র-জনতা শহীদ হয়ে, পুঙ্গুত্ববরণ করে ফরিয়াদের টাকা কামানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।
প্রশাসনে বন্চিত বলে কিছু লোকের পদোন্নতি হয়েছে। তবে জনগণের কোন লাভ এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
বাজার সিন্ডিকেট আগের মতই আছে। চাঁদাবাজের চেহারা পরিবর্তন হয়েছে। চাঁদা থামে নি।
তাহলে এত রক্ত যারা দিলেন তাদের লক্ষ্য আদৌ কি পুরণ হবে! নিজ চোখে এসব দেখে আমি হতাশ!