জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচরে কৃষকদের মাঝে পানি সাশ্রয়ী ধান চাষের আধুনিক কৌশল ছড়িয়ে দিতে অনুষ্ঠিত হলো ‘কৃষক মাঠ দিবস’
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে জামালপুর সদর উপজেলার রায়েরচর মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ‘জেন্ডার ইনক্লুসিভ মার্কেট সিস্টেমস ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশন (GESMIN)’ প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে ধান চাষে জলবায়ু-বান্ধব একটি কার্যকর পদ্ধতি অল্টারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং (AWD) তুলে ধরা হয়।
এই কর্মসূচি GESMIN প্রকল্পের আওতায় জামালপুর জেলায় পরিচালিত ১২টি AWD প্রদর্শনী প্লটের একটি অংশ। মাঠ দিবসে স্থানীয় কৃষকদের সরাসরি শেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়, যেখানে তাঁরা একজন সফল প্রদর্শনী কৃষকের মাধ্যমে AWD পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগ, অভিজ্ঞতা ও সুফল সম্পর্কে জানতে পারেন।
মাঠ দিবসে উপস্থিত কৃষকদের সামনে তুলে ধরা হয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান: চলতি বোরো মৌসুমে ৩০ শতক জমিতে AWD পদ্ধতি ব্যবহার করে একজন কৃষক দিয়েছেন মাত্র ২৪ বার সেচ, যার খরচ হয়েছে ১,৮০০ টাকা। অথচ একই আকারের জমিতে প্রচলিত পদ্ধতিতে সেচ দিতে হয়েছে ৩৮ বার, খরচ হয়েছে ২,৮৫০ টাকা। এই তুলনা পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে যে প্রদর্শনী প্লটে AWD পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় প্রায় ৩৬.৮৪% সেচ কম লেগেছে এবং সেচ বাবদ খরচও প্রায় ৩৫-৩৭% কমেছে।
মাঠ দিবসটির মূল উদ্দেশ্য ছিল, কৃষকদের মধ্যে AWD পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া, কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী করে তোলা, এবং জলবায়ু-বান্ধব কৃষি (CSA), গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (GAP) সহ অন্যান্য উপযোগী প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রায় ১২০ জন কৃষক। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ৮ জন কমিউনিটি মার্কেটিং এজেন্ট, ১১ জন নারী উদ্যোক্তা, ১০১ জন উৎপাদক দলের সদস্য, ৩ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা—শফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম ও কামরুল হাসান, ৫ জন কমিউনিটি ফেসিলিটেটর এবং GESMIN প্রকল্পের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার শ্যামল কুমার দাস।
আয়োজকরা জানান, এই আয়োজনের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ধান চাষের প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া, এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করে অধিক লাভজনক কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করাই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, জেসমিন প্রজেক্ট ২০২৩ সাল থেকে জামালপুর জেলার ৪টি উপজেলাতে (সদর, মেলান্দহ, ইসলামপুর এবং দেওয়ানগঞ্জ) কাজ করছে। এটি মূলত অস্ট্রেলিয়ান সরকারের সহায়তায় অস্ট্রেলিয়ান এনজিও কো-অপারেশন প্রোগ্রামের (ANCP) মাধ্যমে বাস্তবায়িত এনএসভিসি প্রজেক্টের বর্ধিত অংশ যা ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জামালপুর জেলায় কাজ করেছে।
মোঃ ইমরান মাহমুদ
জামালপুর প্রতিনিধি
১৫.০৫.২৫