চলে গেলেন বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। গতকাল (শুক্রবার) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
শনিবার (১০জুন) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জানাজার আগে বর্ষীয়ান এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ রাজনীতির অঙ্গনে ছড়িয়ে থাকা তার ভক্তরা-শীষ্যরা।
কিন্তু সিরাজুল আলমের রাজনৈতিক সহকর্মীরা মনে করেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক হিসেবে প্রাপ্য সম্মান পাননি তিনি।
এ ব্যাপারে ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “সিরাজুল আলম খানের অবদান আইয়ুব সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-সেটি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি ও পটভূমি রচনায় তার যে অবদান, সেটা জাতির ইতিহাসে চিরদিন অক্ষয় হয়ে থাকবে।
“পরবর্তীকালে রাজনৈতিক মতপার্থক্য হয়েছে, কিন্তু তার এই অবদান সেটা জাতি যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বীকৃতি দিল না… আমি মনে করি এটা একটা অপরাধ, জাতির পক্ষ থেকে একটা অপরাধ করা হল।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে জাতির এই সূর্য সন্তানকে জাতির পক্ষ থেকে, জনগণের পক্ষ থেকে যে সন্মান জানানো উচিৎ ছিল, আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার সেই সম্মান তাকে জানাতে পারেনি।
“সিরাজুল আলম খানের এই প্রয়াণে আজকে জাতীয় শোক দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া উচিৎ ছিল। বাংলাদেশে ও সিরাজুল আলম খান এক এবং অবিচ্ছেদ্য। দেশের স্বার্থের বাইরে তার নিজের ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ ছিল না।”
ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “সিরাজুল আলম খানকে সম্মান জানালে রাষ্ট্র ছোট হত না, রাষ্ট্রের কোনো ক্ষয় হত না।
“আজকে দেখেন, জানাজাতে সরকারি দলের একজন মানুষও নাই। অথচ সরকারি দলের বাঘা বাঘা কয়েকজন নেতার নাম বলা যাবে এখন জীবিত, তাদের বয়স বেশি হয়েছে বটে তবে আসতে পারতেন এই জানাজায়।”
জাসদের এক সময়ের নেতা মান্না বলেন, “ইতিহাস বলবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে উনার যে অবদান, এগুলো অস্বীকার করা যাবে না। সত্যি কথা হচ্ছে, সিরাজুল আলম খান না থাকলে এই স্বাধীনতা কীভাবে বিকশিত হত, কীভাবে আসত এটা নিয়ে অনেক গবেষণার ব্যাপার আছে। তাকে সম্মান না দিয়ে ছোট হয়েছে সরকার, তাদের সংকীর্ণ মন-মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।”
গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, “তার বিশিষ্ট ভূমিকাকে রাষ্ট্রের যেভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দরকার ছিল, রাষ্ট্র সেটা দেয়নি। এটা রাষ্ট্রের দুর্বলতা বলে আমি মনে করি।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশে তার মতো একজন কিংবদন্তি রাজনীতিক যথাযোগ্য মর্যাদা হয়ত পাননি এই কারণেই যে, তিনি স্বাধীনতার পরেই বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।”
(এইদিনএইসময়/১০জুন/তাবী)