১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার

‘৮৫.৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যার জন্য দায়ী ইন্টারনেট’

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img
spot_img

ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে ইন্টারনেট কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকেই। কিন্তু ইন্টারনেট তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকাংশেই নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসছে।

আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে অংশ নেওয়া ১৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭২.২ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা তাদের জীবনে কখনো না কখনো মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। এদের মাঝে ৮৫.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, তাদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে।

ইন্টারনেটকে ‘পুরোপুরি দায়ী’ মনে করেন ২৬.১ শতাংশ এবং ‘মোটামুটি দায়ী’ ভাবেন ৫৯.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে ইন্টারনেটকে দায়ী করছেন না মাত্র ৮.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের সমীক্ষায় ১৭৭৩ জন অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে রয়েছেন ৪৯.৫ শতাংশ নারী, ৪৯.৭ শতাংশ পুরুষ এবং ০.৮ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গ। তন্মধ্যে ১৬ থেকে ১৯ বছরের শিক্ষার্থী ১৩.২ শতাংশ, ২০ থেকে ২৫ বছরের শিক্ষার্থী ৭৬.৩ শতাংশ এবং ২৬ থেকে ৩০ বছরের শিক্ষার্থী রয়েছেন ১০.৫ শতাংশ। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৮.৬ শতাংশ কলেজ পড়ুয়া, ৬৪.৩ শতাংশ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী, ৮.৪ শতাংশ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং ৮.৭ শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশী।

শনিবার আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনের বিষয়বস্তু ছিল “শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব: কতটুকু সতর্ক হওয়া জরুরি”-শীর্ষক সমীক্ষা।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী,  বিপ্লব চন্দ্র সরকার, প্রোগ্রামার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, ড. মারুফ আহমেদ খান, ডেপুটি সিভিল সার্জন, টাঙ্গাইল এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ।

সংগঠনটির দ্বারা পূর্বে পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যায়, পড়াশোনাসহ বিভিন্ন কারণে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের কারণে ৭০.৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী নেতিবাচক প্রভাবের মুখোমুখি হন। এই তথ্য ও উপাত্ত তরুণ সমাজের সাথে ইন্টারনেট এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ককে গভীরভাবে খতিয়ে দেখবার গুরুত্ব জানান দেয়। যার প্রেক্ষিতে আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষকবৃন্দ বিষয়টিকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে এই জরিপের আয়োজন করে।

তাদের গবেষণায় উঠে আসে প্রয়োজন কিংবা অপ্রয়োজনে নিত্য-নৈমিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনুপাতের বিষয়। সমীক্ষা অনুসারে, ৩৮.২ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা বিষয়ক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। ৬৭.৫ শতাংশ অবসর সময় কাটাতে, ৪২.৯ শতাংশ যোগাযোগের প্রয়োজনে, ২৪.৯ শতাংশ অনলাইন গেম খেলতে বা ভিডিও দেখতে, ১২.৬ শতাংশ অনলাইনে কেনাকাটা করতে এবং ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। জরিপ অনুসারে আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীদের বড় অংশই অফলপ্রসূ কাজে ইন্টারনেটে বেশি সময় ব্যয় করেন।

এতে দেখা যায়, অপরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন ৬২.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মাঝে দিনে ১১ ঘণ্টার উপরে অনলাইনে থাকেন ৬.২ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১৯.৫ শতাংশ জানান যে, তারা ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মত ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ইন্টারনেটে থাকেন ৩৬.৬  শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৩২.৩ শতাংশ ব্যবহার করেন ২ থেকে ৪ ঘণ্টার মত।

জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৪.৩ শতাংশ জানান, ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ‘প্রচণ্ড নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে। ৫৭.২ শতাংশের স্বাভাবিক জীবনে ‘কিছুটা নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে বলে জানা যায়।

নেতিবাচক প্রভাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫৯.৬ শতাংশ মনে করেন ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের পড়াশোনায় মনোযোগের বিঘ্নতার জন্য দায়ী। ১৭.৮ শতাংশ ইন্টারনেটে পর্ন দেখা, সাইবার ক্রাইম, বাজি ধরা, বুলিং করা প্রভৃতি অপ্রীতিকর কাজের সাথে সংযুক্ত হয়ে পড়েছেন। ২৩ শতাংশ ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছেন, ৩৫.৬  শতাংশ ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন ধরণের মানসিক চাপ অনুভব করেছেন এবং ২০.৩ শতাংশ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন বলে সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আঁচল ফাউন্ডেশনের এই জরিপে ১৭০০-এর অধিক তরুণ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী কিছু কিছু ক্ষেত্রে আশঙ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে যা আমাদের ভাবতে সহায়তা করবে আসলেই ইন্টারনেটের ব্যবহার এ বয়সী মানুষদের উপকার করছে নাকি অপকারটাই বয়ে নিয়ে আসছে। বিশেষ করে ১৯-৩০ বছর বয়সী যে তরুণ যুবক গোষ্ঠী আছে তাদের হতাশা, বিষণ্ণতা এবং অন্যান্য সামাজিক-মানসিক অস্থিরতা আগের তুলনায় অনেক বেশি। এদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট কিছুটা দায়ী বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে।

(এইদিনএইসময়/১০জুন/এলএ)

সর্বশেষ নিউজ