৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

মৌলভীবাজারে বিএসএফের বাধায় মনু নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
spot_img
spot_img

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিএসএফের বাধায় ৩টি স্থানে মনু নদীর প্রতিরক্ষা কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিএসএফ নদীর বাঁধের কাজ করতে না দেওয়ায় স্থানীয়রা নদীভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন। সেই সঙ্গে হুমকির মুখে রয়েছে চাতলাপুর ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ নদীর তীরবর্তী কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি।

স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েও কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে মনু নদীর ভাঙন হতে মৌলভীবাজার জেলা রক্ষা প্রকল্পের শরীফপুর অংশের কাজ এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালে মনু নদীর ভয়াবহ বন্যায় কুলাউড়া উপজেলার পুরো শরীফপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর হারিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন। এ সময় চাতলাপুর চেকপোস্ট এলাকার রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট পুরোটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে প্রতিরক্ষা বাঁধ, নদী আর গ্রাম কোনটির কোনো অস্তিত্ব থাকে না। সেই সঙ্গে সীমান্তবর্তী এ ইউনিয়নের লোকজন প্রতিটি মুহূর্তে বন্যা আতঙ্কে তাদের দিন কাটে। কখন যে উজানের নেমে আসা তীব্র স্রোত আর নদীর গর্জনে ভয়ে অনেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে নদীর বাঁধ কিংবা অন্যত্র আশ্রয় নেন। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি বাস্তবায়ন না করা যায়, তাহলে নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মনু নদীর ভাঙন হতে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষায় ৯৯৬ কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্পটি ২০২০ সালের ২১ জুন একনেকে অনুমোদন হয়। সেই প্রকল্পে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম, নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল ও বাগজুরসহ মোট ৪টি স্থানে ২ কিলোমিটার ২০০ মিটার অংশে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজ রয়েছে। ওই কাজের চুক্তিমূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকার।

২০২১ সালে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। ৪টি স্থানে বাংলাদেশ অংশের বাঁধে মোট ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩২টি সিসি ব্লক নির্মাণ, ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৭টি জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ এবং বাঁধ পুনর্বাসন কাজ রয়েছে। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ তৈরির কাজ সম্পন্ন করে রাখে। ৪টি স্থানের মধ্যে দত্তগ্রামে বিএসএফের সাথে বিজিবির সহযোগিতায় পতাকা বৈঠকের পর মৌখিক সম্মতিতে কাজ বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও গত বছরের ১৩ জানুয়ারি থেকে বিএসএফের বাঁধার কারণে নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল ও বাগজুর এলাকায় কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রথমবার নদীতে জিও ব্যাগ ফেলতে চাইলে ভারতীয় বিএসএফ তাদের কাজে বাধা দেয়। এরপর আরও একাধিকবার সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলত গেলে এতেও বাঁধার সম্মুখীন হয়। এতে করে টানা এক বছর পাঁচ মাস ধরে নদীর ভাঙন রক্ষায় তীর সংরক্ষণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, বিএসএফের বাধার মুখে আমার ইউনিয়নের তিনটি স্থানে প্রতিরক্ষা কাজ দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। এই কাজ যথাসময়ে না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে চাতলা ব্রিজ ও নিশ্চিন্তপুর এলাকা দিয়ে নদী ভাঙনের আশংকা রয়েছে। এতে শরীফপুর ইউনিয়নসহ হাজীপুর ইউনিয়ন, কমলগঞ্জের পতনউষা ও রাজনগরের কামারচক ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত বন্যায়ও ইউনিয়নের ৮-১০টি গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বন্ধ থাকা কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, ৪টি স্থানের কাজের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে বিজিবির সহযোগিতায় বিএসএফের সাথে পতাকা বৈঠক করে মৌখিক সম্মতিতে দত্তগ্রাম স্থানের কাজ চলমান রয়েছে। সর্বশেষ গত ৭ মার্চ যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ হতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন ভারতের নয়াদিল্লিতে একটি ডিও পত্র প্রদান করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত কোন অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই স্থানের স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য ভারত হতে কাজটি বাস্তবায়নের অনুমোদন প্রয়োজন।

(এইদিনএইসময়/১১জুন/এলএ)

সর্বশেষ নিউজ