নড়াইলের তারাপুর গ্রামের একটি খামারে বেড়ে উঠেছে এক আশ্চর্য ষাঁড়—নামের সঙ্গে চরিত্র মিলে গেছে তার। তাকে বলা হচ্ছে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’। ওজন প্রায় ৩৫ মণ (১,৪০০ কেজি), দৈর্ঘ্য ১১ ফুট এবং উচ্চতা ৬ ফুট নড়াইল জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির গরু বলে দাবি করেছেন গরুটির মালিক মিল্টন শিকদার।
ব্ল্যাক ডায়মন্ডের শৈশব থেকে দৈত্যাকার রূপে উত্তরণ
প্রায় তিন বছর আগে যশোরের সাতমাইল হাট থেকে ৫০০ কেজি ওজনের একটি ফ্রিজিয়ান-সাহিওয়াল জাতের গরু কিনেছিলেন মিল্টন। তখন থেকেই পরিকল্পনা ছিল—এটিকে খামারে রেখে যত্নে বড় করবেন। সময়, পরিশ্রম আর যত্নে সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
গায়ের রঙ কালো, দেখতে ঠিক হীরের মতো চকচকে। তাই নাম দিয়েছি ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’,” বলেন মিল্টন শিকদার।
প্রাকৃতিক উপায়ে পালনের দৃঢ় সংকল্প
মালিকের ভাষ্য অনুযায়ী, গরুটিকে একেবারে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হয়েছে। কোনো কৃত্রিম মোটাতাজাকরণ ওষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়নি। প্রতিদিন খৈল, ভুট্টার গুঁড়া, চিটাগুড় ও তাজা ঘাস খাওয়ানো হয়েছে।
যদি ওষুধ দিতাম, ওজন আরও বাড়তো ঠিকই; কিন্তু প্রাণশক্তি কমে যেত। আমি চাইনি গরুটি অসুস্থ হোক বা কৃত্রিম হোক। এখন সে সুস্থ, শক্তিশালী এবং কোরবানির জন্য একদম প্রস্তুত।”
দাম চাওয়া ১২ লাখ, হাটে নয়, খামারেই বিক্রি
গত কোরবানির ঈদে যখন গরুটির ওজন ছিল ৯০০ কেজি, তখনই বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিক্রি থেকে সরে আসেন মিল্টন। এবার তিনি সিদ্ধান্তে অটল।
তিন বছর সন্তানের মতো পালেছি। এবার বিক্রি করব। হাটে নিয়ে কষ্ট দেব না, খামার থেকেই দিয়ে দেব। দাম চাচ্ছি মাত্র ১২ লাখ টাকা। লাভ বড় বিষয় নয়—যিনি ভালোবেসে কিনবেন, তার কাছেই দিতে চাই।
ব্ল্যাক ডায়মন্ড শুধু বড় নয়, চরিত্রেও অনন্য
খামারের কর্মীদের ভাষ্যমতে, ব্ল্যাক ডায়মন্ড যেমন বিশালাকৃতি, তেমনি শান্ত স্বভাবের। তবে রেগে গেলে ১৫-২০ জন মানুষ লাগতে পারে তাকে সামলাতে।
প্রতিদিনই গরুটি দেখতে আসছেন উৎসুক মানুষ। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন এই বিশাল ষাঁড়ের গল্প।
সরকারি নজরদারি ও স্বাস্থ্য প্রশংসা
নড়াইল সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ কুমার কুন্ডু বলেন, “তারাপুরের খামারটি নিয়মিত আমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ব্ল্যাক ডায়মন্ড দেখতে যেমন চমৎকার, তেমনি স্বাস্থ্যবানও। আশাকরি, খুব ভালো দামেই বিক্রি হবে।
শেষ কথা: এক গরু, এক গল্প, এক ভালোবাসা
ব্ল্যাক ডায়মন্ড এখন শুধু একটি ষাঁড় নয়, একটি গল্প, এক অধ্যবসায়ের প্রতীক। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন ব্যবসায়ীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তেমনি সাধারণ মানুষের কাছেও এই গরুটি হয়ে উঠেছে কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।