লাখ লাখ মুসলমানের কাছে ওমরাহ পালন সবসময়ই একটি স্বপ্ন। কিন্তু ভিসার জন্য আবেদন, হোটেলের ব্যবস্থা ও পরিবহণ বুকিং প্রক্রিয়ায় প্রায়শই বিভ্রান্তি ও জটিলতা তৈরি হয়। অনেকে বিভিন্ন হজ-ওমরাহ সংক্রান্ত এজেন্সির ওপর বেশি নির্ভর করেন, আবার অনেকে পর্যটন ভিসায় সৌদি গিয়ে ওমরাহ পালনের চেষ্টা করেন।
খবরে বলা হয়, সৌদি আরব ওমরাহ পালনের জন্য প্রক্রিয়াটি সহজ করার লক্ষ্যে নিয়মকানুনে একাধিক পরিবর্তন এনেছে। ভিসা আবেদন, পরিবহণ থেকে শুরু করে হোটেল পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপ এখন সরকারি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত, যা নিশ্চিত করবে সুসংগঠিত ও স্বচ্ছভাবে ওমরাহ পালন। এখানে নিয়মকানুনে আনা ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন উল্লেখ করা হলো, যা মুসলমানদের ওমরাহ পরিকল্পনা করার আগে অবশ্যই জানা উচিত।
১. ভিসার জন্য আবেদন করার সময় সৌদি আরবে থাকার আবাসন বুকিং করতে হবে
ওমরাহ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা আর হোটেল বুকিংয়ের কাজটি পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দিতে পারবেন না। ওমরাহ ভিসার জন্য আবেদন করার সময়, তাদের হয় মাসার সিস্টেমের (নুসুক অ্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত) মাধ্যমে একটি অনুমোদিত হোটেল বেছে নিতে হবে অথবা নিশ্চিত করতে হবে, তারা সৌদি আরবে আত্মীয়ের বাসায় থাকবেন।
আরব আমিরাত ভিত্তিক আসা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী কায়সার মাহমুদ বলেন, “হোটেল ও পরিবহণ ব্যবস্থা সৌদি আরবের ‘মাসার’ নামক ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত। এমনকি ট্যাক্সিও পোর্টালের মাধ্যমে বুক করতে হয়, যাতে শুধু অনুমোদিত পরিষেবা ব্যবহার করা যায়।”
২. আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকতে চাইলে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট আত্মীয়ের সৌদি পরিচয়পত্রের তথ্য
যারা পরিবার বা বন্ধুদের বাসায় থাকার পরিকল্পনা করছেন, তাদের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ইউনিফায়েড সৌদি আইডি নম্বর প্রদান করতে হবে, যা সরাসরি ওমরাহ ভিসার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। যদি ভ্রমণ পরিবর্তন বা স্থগিত করা হয়, সেক্ষেত্রেও বসবাসের প্রমাণ হিসেবে একই ব্যক্তির পরিচয়পত্র সিস্টেমে আপডেট করতে হবে।
৩. পর্যটন ভিসায় ওমরাহ নয়
পর্যটন ভিসায় গমন করে আর ওমরাহ পালন করা যাবে না। এ বিষয়ে সতর্ক করে ওমরা-হজ সংক্রান্ত এজেন্সিগুলো জানায়, যারা এটি করার চেষ্টা করবেন তাদের আটকে দেওয়া হতে পারে। এমনকি, তাদেরকে মদিনায় রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশাধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হতে পারে।
৪. ওমরাহ ভিসা বাধ্যতামূলক
সব ওমরা করতে চাওয়া ব্যক্তিদের নুসুক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ওমরাহ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে, হয় এটি ই-ভিসা হিসেবে অথবা অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে প্যাকেজ বুকিং দিয়ে।
৫. ভ্রমণপথের কঠোর নিয়ম
ভিসার জন্য আবেদন করার সময়, ভ্রমণপথ উল্লেখ করতে হবে এবং এটি পরিবর্তন বা স্থগিত করা যাবে না। অতিরিক্ত সময় ধরে অবস্থান করলে জরিমানা হতে পারে।
কেউ যদি অনুমোদিত পরিকল্পনার বাইরে অবস্থানের সময়সীমা বাড়াতে চান, তাহলে তা করা যাবে না। যদি ফিরতি যাত্রা স্থগিত করা হয়, তাহলে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭৫০ রিয়াল জরিমানা করা হবে। এমনকি, তিনি সিস্টেম ব্লকেজের মুখোমুখি হতে পারেন।
৭. বিমানবন্দরে বুকিং চেক করা
সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে কর্মকর্তারা নুসুক বা মাসারের মাধ্যমে হোটেল ও পরিবহণ বুকিংয়ের বিষয়টি যাচাই করবেন। কেউ আগে থেকে বুকিং না করলে তার জরিমানা অথবা তাকে সেখানে আটকে দেওয়া হতে পারে।
৮. শুধু অনুমোদিত ট্যাক্সি ও পরিবহণ
ওমরা করতে যাওয়া ব্যক্তিদের অবশ্যই নুসুক অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত ট্যাক্সি বা ট্রেন ব্যবহার করতে হবে অথবা আগে থেকে পরিবহণ বুক করতে হবে। অনুমোদিত ট্যাক্সি, বাস বা ট্রেন বাধ্যতামূলক। বিমানবন্দর থেকে কেউ ইচ্ছেমতো গাড়ি নিতে পারবে না।
৯. ট্রেনের নিয়ম ও সময়সূচি
হারামাইন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওমরাযাত্রীদের জন্য অন্যতম পরিবহণ, তবে এটি কেবল রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। যদি কেউ শেষ ট্রেনের পরে সৌদি বিমানবন্দরে অবতরণ করেন, তাহলে তাকে আগে থেকেই বিকল্প অনুমোদিত পরিবহণ বুকিং করে যেতে হবে। অন্যথায়, তাকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
১০. নিয়ম লঙ্ঘনে বড় অঙ্কের জরিমানা
অননুমোদিত ট্যাক্সি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত সময় ধরে থাকা পর্যন্ত যেকোনো নিয়মকানুন লঙ্ঘনের জন্য ৭৫০ রিয়াল থেকে শুরু করে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হবে। ওমরাযাত্রীদের কঠোরভাবে নিয়ম মেনে চলতে হবে।
সূত্র: খালিজ টাইমস