বিশিষ্ট লেখক, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
পান্না কায়সারের মৃত্যুতে দেয়া শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য হিসেবে পান্না কায়সারের অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। এ সময় তারা মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
নিহতের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, সকাল আটটার দিকে হঠাৎ করেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। তার মেয়ে শমী কায়সার দ্রুত তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
পান্না কায়সারের প্রথম জানাজা বাদ জুমা গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই মরদেহ আনা হবে তার ইস্কাটনের বাসায়। সেখানে কিছু সময় রাখার পরে মরদেহ নেয়া হবে বারডেমের হিমঘরে। রোববার সকালে নেয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা শেষে দাফনের জন্য নেয়া হবে বলেও জানান মরহুমার স্বজনরা। তবে কোথায় দাফন করা হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।
পান্না কায়সারের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৫ মে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর করা এই শহীদ জায়া শিক্ষকতা করেছেন বেগম বদরুন্নেসা কলেজে। স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল সময়কালে শহীদুল্লাহ কায়সারের হাত ধরে শুরু করে তার প্রায় সাড়ে চার দশকের পথচলা আধুনিক সাহিত্যের সঙ্গে, বাঙালি সংস্কৃতি আর প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শহীদুল্লাহ কায়সারকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। এরপর তিনি আর ফেরেননি। এরপর থেকে পান্না কায়সার একা হাতে মানুষ করেছেন তার দুই সন্তান অভিনেত্রী শমী কায়সার এবং অমিতাভ কায়সারকে।
সংসার জীবনে আবদ্ধ না থেকে পান্না কায়সার দায়িত্ব নিয়েছেন লাখো কোটি শিশু-কিশোরকে সোনার মানুষে পরিণত করার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত দেশের বৃহত্তম শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন ১৯৭৩ সালে। ১৯৯২ সাল থেকে সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন তিনি। ছিলেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতিও।
১৯৯৬-২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন পান্না কায়সার। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা, গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদান রাখায় ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
(এইদিনএইসময়/০৪আগস্ট/এলএ)