২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবার
--বিজ্ঞাপন-- Nagad

পুলিশ কর্মকর্তার জন্মদিনে ‘জান্নাতে পরিবার নিয়ে থাকার’ অভিপ্রায় কন্যার

মাশিয়াত হক মাহি
spot_img

আপনাদের সবার উইশ করা শেষ! আমার মনে হয় শেষ। যাক বাবা এত ভিড়ের মধ্যে উইশ করতে আমার একদম ভালো লাগে না। তাই আমি সবার জন্মদিনের এক দুই দিন পর উইশ করি। ১৫ তারিখ ছিল আমার এক বড় ধরনের শত্রুর এবং অক্সিজেনের জন্মদিন।

কেন সে আমার শত্রু সেটাও আমি বর্ণনা করবো একটু পরে। ধৈর্য ধরতে হবে। মাঝে মাঝে যখন আমার রাগ হয় তখন আমি বলি যে আমি হাসপাতালে চেঞ্জ হয়ে গেছি। তোমরা আমার বাবা-মা না। কিন্তু যখন আমি আমার বাবার চেহারার দিকে তাকাই তখন ১০০% শিওর হয়ে যাই আমি চেঞ্জ হ‌ইনি।

কারন আমার চোখ নাক কান সব বাবার মত। আমি যদি চিকন হতাম তাহলে হয়তো আলাদাই করা যেত না। শুধুমাত্র চেহারার মিল নাই; তার সাথে আমার আরও অনেক মিল আছে। যেমন আমার এবং আমার বাবার গলা একেবারে লাউড স্পিকার। আমরা দুজন যদি চিৎকার করা শুরু করি তাহলে এক মাইল দূর থেকেও আমাদের চিৎকার শোনা যাবে।

আমি এবং আমার বাবা দুজনেই অসম্ভব পরিমাণের রাগী মানুষ। যদিও আমি আমার বাবার থেকে একটু বেশি রাগী। আমার ধারণা আমার জন্ম হওয়ার পরে আমার রাগ দেখার পরে আমার বাবার রাগ কমে গেছে। আর আমার এবং আমার বাবার দুজনের কানই চিতা বাঘের মত। যদি হাফমাইল দূর থেকেও কেউ আমাদের দুর্নাম করে ঠিকই আমরা শুনতে পেয়ে ঝগড়া করা শুরু করি। দুজনেরই আগে থালাবাসন ভাঙ্গার অনেক অভ্যাস ছিল।‌ কিন্তু এখন বয়সের সাথে সাথে দুজনেরই অভ্যাস চলে গেছে। এখন রাগ হলে এখন থালাবাসন আর ভাঙ্গি না।

তবে আমার সাথে আমার বাবার অমিলও আছে। আমার বাবা একজন খুব ট্যালেন্টেড মানুষ।‌ সে সব সময় পড়াশোনা অনেক ভালো।‌ কিন্তু আমার মাথার ট্যালেন্ট ফ্যালেন্ট নাই। খালি গোবর। পড়াশোনায় একদমই ভালো না। যাই হোক, অনেক মিল অমিল নিয়ে কথা বললাম। এখন আসি কেন আমি আমার বাবাকে শত্রু বলি। তার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, সে তার বড় মেয়ে এবং ছেলেকে বেশি ভালোবাসে। আমাকে এক সময় অনেক ভালোবাসতো। এখন আর ভালোবাসে না।

তবে আমার বিশ্বাস বাবার সাথে আমার এই ভালোবাসার গ্যাপ পরার একটা কারণ আছে। যখন আমার বাবার পোস্টিং নাটোরে ছিল, আমার বাবা তখন এডিশনাল এসপি ছিল। সেই সময়কার একটা স্মৃতি আমার খুব মনে পড়ে। আমার যখন কোন কারণে রাগ হত, আসলে আমি সবসময়ই রাগ করতাম। পান থেকে চুন খসলেই রাগ করতাম। প্রচুর আহ্লাদী ছিলাম। এখনো আছি।

তখন আমার বাবা রাগ ভাঙানোর জন্য সব সময় একটা কাজ করতো। দূর থেকে একটা গান “আয় খুকু আয়” গানটা গাইতো।‌ আমার যতই রাগ থাকতো, আমি চলে আসতাম বাবার কোলের মধ্যে। এই গানের লাইনটা এখন আর বলে না। হয়তো মনেই নাই। কিন্তু আমার অনেক মনে পড়ে এই স্মৃতিটা।

আস্তে আস্তে বাবার প্রমোশন হলো। বাবা এসপি হল। কাজের চাপ বাড়ল। সকালে আমাদের ঘুম থেকে ওঠার আগে বাবা চলে যেত। দুপুরে অল্প সময়ের জন্য খেতে আসতো। খাওয়া দাওয়ার পর আবার অফিসে চলে যেত। আবার সেই রাত করে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরতো আমার মনে হয় আমার আর বাবার ভালোবাসার গ্যাপের মাঝে এটাই একমাত্র কারণ।

যখন কিংশুক বা মৌমি ছোট ছিল, তখন বাবার কাজের চাপ কম ছিল। তাই ওদের সময় দিতে পারতো। তাই হয়তো ওদের প্রতি বাবার ভালোবাসা আর স্মৃতি একটু বেশি। তবে আমি এখন অনেক মিস করি সেই হাত ছাড়িয়ে ‘আয় খুকু আয়’ বলে গান গাওয়াটাকে।

এখন বাবা রাগ ভাঙ্গানোর সময় পায় না। আসলে অনেকে পুলিশের এই দোষ ধরে ওই দোষ ধরে। ‘ঘুষখোর খারাপ অমানুষ’ যারা এসব কথা বলে তারা কখনো পারিবারিক পরিস্থিতি দেখে না। তারা যে তাদের সন্তানকে আলাদা করে সময় দিতে পারে না, এগুলো কারো চোখে পড়ে না। কিন্তু যারা আমরা পুলিশের সন্তান তারা বুঝি এগুলো কত কষ্টের।

বাবার প্রতি যদি বেশি চাপ না পড়তো তাহলে হয়তো বাবাকে শত্রু বলতাম না। যাই হোক অনেক কথা বলে ফেললাম। অনেকে অনেক ভাবে অনেক কিছু লেখে যেমন, I love you baba more than my life কিন্তু এগুলো আমার কাছে খুব পুরাতন লাগে। আমার কাছে মনে হয় বাবা তুমি আমাকে যতটুকু ভালোবাসো তার থেকেও অনেক গুণ বেশি ভালোবাসি তোমায়। I love you বাবা। দোয়া করি যেন তোমার মৃত্যু কখনো আমাকে দেখতে না হয়। তোমার আগে যেন আমি মারা যাই। আর জান্নাতে সবাই একসাথে পরিবার নিয়ে থাকতে পারি। তখন আর তোমার কোন কাজের চাপ থাকবে না।

সর্বশেষ নিউজ