রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি জানা যাবে বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিচ্ছেন কে।
রাষ্ট্রপতি হতে চান কক্সবাজারের বাসিন্দা জগদীশ বড়ুয়া পার্থ। সেই আগ্রহ থেকেই মনোনয়নপত্র কিনতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বারান্দায় ঘুরছেন তিনি। গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ইসিতে মনোনয়নপত্র কিনতে ঘুরছেন জগদীশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার আবেদনপত্র গৃহীত হয়নি।
মঙ্গলবার গায়ে কালো পাঞ্জাবি আর চাদর জড়িয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের পাশে ঘুরতে দেখা যায় তাকে। কয়েকদিন ধরে ঘুরলেও মনোনয়নপত্র কিনতে পারেননি বলে জানান জগদীশ।
নিজেকে বাংলাদেশ মঙ্গল পার্টির চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে জগদীশ জানান, তিনি এর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচন করেছেন। ঢাকা-৮ আসনে সংসদ সদস্য পদেও নির্বাচন করেছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র পেতে প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হতে হলে প্রার্থীর বয়স ৩৫ বছরের বেশি হতে হবে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতার পাশাপাশি থাকতে হবে একজন করে প্রস্তাবক ও সমর্থক।
রাষ্ট্রপতি পদের আবেদনপত্র হাতে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে জগদীশ বলেন, আমাদের ২১তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সেই সুবাদে তফসিল ঘোষণা করছেন আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে এখানে ২৫ তারিখের পর বারবার এসে দেখতে পাচ্ছি, আমাকে মনোনয়ন ফরম দিচ্ছে না। তারা আমার আবেদন গ্রহণ করছে না। আমি একজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশন থেকে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে জগদীশ বলেন, অনলাইনে গিয়ে দেখি ভুয়া। তফসিলে যে নম্বর দেয়া আছে সে নম্বরে অনেক ফোন দিয়েছি, কাউকে পাওয়া যায় না। তাই আজকে আসছি আবেদন নিয়ে।
আমি কি নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছি? এমন প্রশ্ন রেখে এই মনোনয়নপ্রত্যাশী আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আশাদুল হককে কল দিলে তিনি হয় বাইরে থাকেন, নয়তো বলেন সবসময় মিটিংয়ে থাকেন। একবার বাইরের অভ্যর্থনা কক্ষে পাঠায়, একবার ভেতরের অভ্যর্থনা কক্ষে পাঠায়। এদিকে ফোনও রিসিভ করছে না তারা। রিসিভ করলে সমস্যা কোথায়?
এসময় ভারতে দলিত সম্প্রদায় থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে জগদীশ বলেন, আমি বড়ুয়া সম্প্রদায় থেকে এই বাঙালি জাতিকে রক্ষা করার জন্য মঙ্গল ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে আমার অধিকার আছে ভালো কথা বলার জন্য। আমি নিজের জমি বিক্রি করে রাজনীতি করি। কারও ধার ধারি না।
নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র না নিলে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন জানিয়ে জগদীশ বলেন, এরা যদি রিসিভ না করে, তাহলে আমি হাইকোর্টে যাব। আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি, আমি মামলার পর্যায়ে যাব। হিরো আলম যেমন একতারা প্রতীক নিয়ে (বগুড়ার দুই আসনে) উপনির্বাচনে গেছে। ঠিক তেমনিভাবে আমি যাব।
নিজেকে নির্বাচনপ্রিয় মানুষ দাবি করে জগদীশ বলেন, আমি ২০১১ সাল থেকে নির্বাচন করি। আইনি জটিলতা যেটা আছে, এজন্য অবশ্যই আমি লড়াই করব।
নির্বাচনে নিজের ইশতেহার সম্পর্কে তুলে ধরে জগদীশ বলেন, আমার ইশতেহারে বাংলাদেশে যারা ১০ কোটি টাকার ওপর মালিক আছেন, তাদের টাকা বাজেয়াপ্ত করার কথা থাকবে। বাংলাদেশে যত খাসজমি আছে, সেগুলো মাথাপিছু ৫ শতাংশ করে দান করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আশাদুল হক বলেন, উনি আমার কাছে এলে তো হবে না। এ জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তা সিইসির দপ্তরে যেতে হবে। আমার কাছে চাইলে তো হবে না। আমার সঙ্গে উনার দেখা হয়নি। আমি বলেছি নির্বাচনী শাখায় যোগাযোগ করেন।’
এদিকে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কালকে গেলে খোঁজ নেব। কে বা কারা বাধার সৃষ্টি করেছে। তবে আইনগতভাবে কোনো বাধা নেই, যদি আইন অনুযায়ী হয়, তাহলে যে কেউ মনোনয়ন ফর্ম কিনতে পারবে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য গত ২৫ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। যাচাই-বাছাই হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।