১ মে ২০২৪, বুধবার

হেফাজত তাণ্ডবের মিথ্যা তথ্য: আদিলুর-এলানের দুই বছরের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক দশক আগে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হওয়া মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে আসামিদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মামলার রায় পর্যবেক্ষণে বলা হয়, হেফাজতের তাণ্ডবের মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আদিলুর ও এলানের সংগঠন অধিকার বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন করেছে।

এদিকে তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলার রায় শুনতে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার পর্যবেক্ষকরা।

এর আগে, গত ২৪ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন বিচারক। তবে সেদিন তা প্রস্তুত না হওয়ায় রায় ঘোষণা পিছিয়ে আজকের দিন ধার্য করেন বিচারক। জামিনে থাকা দুই আসামি আদিলুর ও এলান আদালতে উপশিত আছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের ওই সমাবেশে পুলিশের উপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ মে সকালে পুলিশসহ ১১ জন মারা যান। অথচ অধিকারের ওয়েবসাইটে একই বছরের ১০ জুন ৬১ জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবদনে বিভিন্ন সময়ে নাশকতার পুরনো কিছু ছবিও যুক্ত করা হয়। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে উস্কানি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে আসামিরা ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় অপরাধ সংঘটন করেছেন।

বিলুপ্ত এই আইনের ৫৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে।

এ অপরাধের জন্য ৫৭(২) ধারায় সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম গণমাধ্যমকে বলেন, আদিলুর রহমানসিহ দুজনের মামলার বিচার হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায়। এই আইনের সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করে অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আইন অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ সাজাই হবে।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভুঁইয়া আশা করছেন খালাস পাবেন তারা। এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আশা করি রায়ে দুজনই বেকসুর খালাস পাবেন। কারণ আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ  সত্য নয়। রাষ্ট্রপক্ষও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।

গত ২৪ আগস্ট রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায়ের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন। তবে ওইদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় রায়ের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করা হয়।

মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরে সমাবেশে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। ওই বছরের ১০ জুলাই নিহতের তালিকা চেয়ে অধিকারকে চিঠি দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংগঠনটি তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

পরে একই বছর ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ডিবির উপপরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম। ওই দিনই গ্রেপ্তার হন অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান। ওই বছরের ৯ অক্টোবর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি আদিলুর।

তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ৩২ জনকে সাক্ষী করে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে  অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ওই বছর ১১ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র আমলে পলাতক আসামি এলানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি মামলাটিতে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়। অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত আদেশের পর উচ্চ আদালতে মামলা বাতিল চাইলে উচ্চ আদালতের আদেশে বিচারকাজ স্থগিত হয়ে যায়।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্য শুরুর দুই বছরের ব্যবধানে বিচার শেষে মামলাটি রায়ের জন্য দিন ধার্য হয়।

(এইদিনএইসময়/১৪সেপ্টেম্বর/এলএ)

সর্বশেষ নিউজ